বিশ্বে গর্ব করার মতো বাংলাদেশের আছে হাজার বছরের সমৃদ্ধ ঐতিহ্য। এই ঐতিহ্যের অন্যতম অনুষঙ্গ স্থাপত্যকলা। শিল্পের এই মাধ্যমে কোনও অংশে কম ছিল না এ অঞ্চল। বাংলাদেশের যে স্থাপনাশৈলী এখনও বিমোহিত করে চলেছে অগণিত ভ্রমণচারী ও মননশীল মানুষকে, তার মধ্যে আছে দেশজুড়ে থাকা অগণিত নয়নাভিরাম মসজিদ। এ নিয়েই বাংলা ট্রিবিউন-এর ধারাবাহিক আয়োজন ‘বাংলাদেশের প্রসিদ্ধ মসজিদ’। আজ থাকছে দিনাজপুরের সুরা মসজিদ নিয়ে প্রতিবেদন।
দেশে মুসলিম স্থাপত্যের অনন্য নিদর্শন দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলার সুরা মসজিদ। প্রায় ৫০০ বছর আগের প্রাচীন স্থাপনাটির নির্মাণশৈলী দেখতে প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসেন হাজারো পর্যটক। এখানে নামাজ আদায় করতে এবং মানত পূরণের আশা নিয়েও আসেন অনেকে।
ঘোড়াঘাট বাসস্ট্যান্ড থেকে ১০ মাইল পশ্চিমে হিলি-ঘোড়াঘাট সড়কের পাশে চৌগাছা নামক স্থানে গেলে দেখা যাবে মসজিদটি। স্থানীয়দের মতে পাঁচ শ’ বছর আগে জিনেরাই নাকি রাতারাতি মসজিদটি নির্মাণ করেছে।
মসজিদটির কারুকাজ ও শৈলী দেখে কারও ধারণা এটি সুলতানি আমলে পঞ্চদশ শতকের শেষদিকে বানানো। মসজিদটির বাইরের দিকের আয়তন উত্তর-দক্ষিণে ৪০ ফুট এবং পূর্ব পশ্চিমে ২৬ ফুট। চার ফুট উঁচু মজবুত প্লাটফর্মের ওপর মসজিদটির কাঠামো গড়ে উঠেছে।
প্রধান কক্ষের আয়তন ১৬ ফুট। নামাজকক্ষটি বর্গাকার। একেক পাশের দৈর্ঘ্য ৪.৯ মিটার করে। সব কোণে আছে অষ্টভুজ স্তম্ভ। মোট ছয়টি স্তম্ভ। কার্নিসগুলো বাঁকানো। পূর্ব দিকে তিনটি এবং উত্তর ও দক্ষিণ দিকে একটি করে খিলান পথ আছে। পশ্চিমে আছে তিনটি কারুকাজ করা মিহরাব। মসজিদের বারান্দাজুড়ে আছে তিনটি গম্বুজ। পুরো মসজিদের দেয়ালে অসংখ্য খোপকাটা টেরাকোটার অলংকরণ আছে। দেয়ালের সুসজ্জিত নকশা বিমোহিত করে দর্শনার্থীদের। উপরে বর্গাকার গম্বুজ। পূর্বদিকে ছোট তিন গম্বুজ বিশিষ্ট একটি বারান্দা আছে।
এ মসজিদে ইটের সঙ্গে পাথরের ব্যবহারও করা হয়েছে। দেয়ালের মাঝে পাথরের স্তম্ভ, ইটের গাঁথুনি চোখে পড়ার মতো। এ ছাড়া প্রত্যেক দরজার নিচে পাথরের চৌকাঠ আছে। এ মসজিদে ব্যবহৃত কালো ও বেলে পাথর বাঙলার পশ্চিম প্রান্তে অবস্থিত রাজমহল থেকে আনা হয়েছে বলে ধারণা করা হয়।
উত্তরে আছে একটি দিঘী। এর পাড়টাও দৃষ্টি কাড়ে দর্শনার্থীদের।
মসজিদটি দেখতে আসা সাজ্জাদ হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, সুরা মসজিদ একটি দর্শনীয় স্থান। বিভিন্ন বইয়ে এর ছবি রয়েছে। মসজিদটি মুসলিমদের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের ধারক। এখানে নামাজ আদায় করতে পেরে নিজেকে খুব সৌভাগ্যবান মনে হচ্ছে। জায়গাটিও অনেক সুন্দর। এই করোনার সময়ও আমার মতো অনেকে এসেছে মসজিদটি দেখতে। তবে এখানে বসার জন্য পর্যাপ্ত জায়গা নেই। এ সবের সমাধান করা হলে আরও অনেকেই এখানে আসবে।
মনের আশা পূরণ করতে এসেছেন গৃহবধূ লাভলি আকতার। বাংলা ট্রিবিউনকে বললেন, ‘অনেকের কাছে শুনেছি এখানে মানত করলে তা পূরণ হয়। এটি নাকি অনেক পবিত্র স্থান। আমিও এসেছি এখানে নিজহাতে রান্না করে এখানে গরিবদের খাওয়াবো বলে।’
মসজিদ কমিটির সেক্রেটারি সেকেন্দার আলী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আমি বেশ কয়েক বছর ধরে মসজিদটির দায়িত্বে আছি। আগে আমার পূর্বপুরুষরা এর দায়িত্বে ছিলেন। এই মসজিদের পেছনে অনেক ইতিহাস। আগামী প্রজন্মের জন্য মসজিদটি সংরক্ষণ করে রাখতে হবে। এর কিছু সংস্কার এখনও বাকি। উপজেলা প্রশাসন ইতোমধ্যে বেশ কিছু কাজ শেষ করেছে। বাকিটাও দ্রুত শেষ করতে পারলে মসজিদটি দেখতে আরও দর্শনার্থী আসবে। বিশেষ করে মসজিদের মূল ফটকে একটি গেট নির্মাণ ও নামাজের জন্য পর্যাপ্ত জায়গার ব্যবস্থা করা গেলে এখানে নামাজ পড়তে আসা মুসুল্লিদেরও সুবিধা হবে।
মসজিদের পেশ ইমাম মিজানুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে প্রতিদিন শত শত দর্শনার্থী আসেন এখানে নামাজ আদায় করতে। কেউ কেউ দেখতেও আসেন।