দেশের সর্বাধিক প্রিয় পর্যটননগরী কক্সবাজারের হোটেল মোটেল এলাকায় সাম্প্রতিক সময়ে বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতা হচ্ছে। জলাবদ্ধতা নিরসনে ৭০ কোটি টাকা ব্যয় করা হলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি বিগত সরকারের নেওয়া অপরিকল্পিত প্রকল্পের কারণে। এর খড়গ পড়ছে পর্যটনশিল্পে। জলাবদ্ধতার কারণে যারপরনাই ভোগান্তিতে পড়ছেন পর্যটকরা; আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন হোটেল-রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ীসহ পর্যটন খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাই।
কক্সবাজার পৌরসভার ১২ নম্বর ওয়ার্ড কলাতলী এলাকাটাই মূলত হোটেল মোটেল জোন। এ জোনে সাড়ে ৩ শতাধিক হোটেল মোটেল ও গেস্ট হাউস রয়েছে। আছে আড়াই শতাধিক রেস্টুরেন্ট। বাসাবাড়ি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মসজিদ ইত্যাদিও রয়েছে। সব মিলিয়ে অনেক মানুষের বসতি এখানে।
কক্সবাজার পৌরসভার ১২ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক (সরকার কর্তৃক পৌরসভার সব কাউন্সিলরদের পদ বাতিল করায়) কাউন্সিলর এমএ মনজুর জানান, মূলত ১২ নম্বর ওয়ার্ডটি ২০১২ সালের দিকে কক্সবাজার পৌরসভায় যুক্ত হয়। এর আগে ছিল কক্সবাজার সদর উপজেলার ঝিলংজা ইউনিয়নের একটি ওয়ার্ড। হোটেল মোটেল জোনসহ পর্যটন এলাকা হওয়ার কারণে এটাকে পৌরসভার আওতাভুক্ত করা হয়। পৌরসভা থেকে উন্নয়নের জন্য এখানে চারটি ব্লক করা হয়। পৌরসভার ওয়ার্ড সৃষ্টির পর থেকে এ
পর্যন্ত এখানে ৭০ কোটি টাকার উন্নয়নকাজ করা হয়। এখানে ছোট-বড় ৫০টির মতো ড্রেন রয়েছে। ইতোমধ্যে তিন ব্লকের সব ড্রেনের সংস্কার ও নির্মাণ শেষ হয়েছে। একটি ব্লকের কাজ বাকি আছে। পৌরসভা এখানে উন্নয়ন করলেও পাহাড় কাটার মাটি এসে ট্রেনগুলো ভরাট হয়ে যাওয়ায় এ জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়।
কক্সবাজার নাগরিক ফোরামের সভাপতি আ না ম হেলাল উদ্দিন বলেন, বিগত সরকার কোনো পরিকল্পনা ছাড়াই বিমানবন্দর উন্নয়নের জন্য কক্সবাজার শহরের সবচেয়ে বড় নালাটি বন্ধ করে দেয়। কক্সবাজার পুরনো ঝিনুক মার্কেটের সামনের বড় নালাটি দিয়ে পুরো শহরের সিংহভাগ পানি সাগরে যেত, সেই নালাটি হঠাৎ বন্ধ করে দেওয়া হয়। এর কুফল এসে পড়েছে পর্যটন জোনে। অপরিকল্পিত প্রকল্প গ্রহণের কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এতে করে পরিবেশ ও প্রতিবেশেরও ক্ষতি হচ্ছে। জানা গেছে, বিমানবন্দরের কারণে বড় নালাটি বন্ধ করে ছোট একটি নালা করা হয়েছে। সেটি দিয়ে পর্যাপ্ত পানি যেতে পারে না।
কক্সবাজার রেস্টুরেন্ট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক রাশেদুল ইসলাম ডালিম বলেন, জলাবদ্ধতার কারণে অনেক রেস্টুরেন্টে পানি ঢুকে যায়। হোটেল মোটেল জোনের ড্রেনগুলো মাটি এসে ভরাট হয়ে যায়। এখানে আড়াইশর বেশি রেস্টুরেন্ট রয়েছে। সড়ক জনপদের ছয়টি কালভার্ট নিচু হয়ে গেছে। সড়কের পশ্চিম পাশের ড্রেনের ওপর বড় স্ল্যাব দেওয়ার কারণে পৌরসভার ময়লা পরিষ্কারের গাড়িগুলো সেখানে প্রবেশ করতে পারে না। পানি বাধাগ্রস্ত হয়, এভাবেও জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়।
কক্সবাজার হোটেল মোটেল গেস্ট হাউস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার বলেন, মূলত পাহাড় কাটার মাটি এসে আমাদের আশপাশের সব ড্রেন ভরাট হয়ে যায়। এ ছাড়া সড়ক বিভাগ সড়কের সংস্কার করতে গিয়ে পুরনো ৬টি কালভার্ট উঁচু না করেই এর ওপর রাস্তা নির্মাণ করেছে। ফলে এসব কালভার্ট দিয়ে পর্যাপ্ত পানি সরতে পারছে না। হোটেল শৈবালের সামনে দিয়ে যে বড় নালাটি আছে তার দুটি জায়গায় গাড়ি পারাপারের রাস্তা করায় পানিগুলো যেতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। আর এ সমস্যার কারণে পর্যটন জোনে জলাবদ্ধতা হয়। ফলে আমরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি।
কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী খোকা বলেন, জলাবদ্ধতা থেকে ব্যবসায়ীদের মুক্তি দিতে হবে। এক্ষেত্রে সরকারের পরিকল্পিত উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।
কক্সবাজার প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মমতাজ উদ্দিন বাহারী বলেন, বিগত সরকার কোনো পরিকল্পনা ছাড়াই এখানে উন্নয়ন করেছে। ফলে আজ জনগণ পর্যটক ও ব্যবসায়ীদের দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে। তাই উন্নয়নের আগে পরিকল্পনাটা খুবই জরুরি।
কক্সবাজার সড়ক ও জনপদ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী রোকন উদ্দিন খালেদ চৌধুরী বলেন, আমি নতুন এসেছি কক্সবাজারে। বিষয়টি আমার নজরে আসার পর। আমি এ ব্যাপারে কাজ শুরু করেছি।
কক্সবাজারের নতুন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহ্উদ্দিন বলেন, পর্যটন জোনের জলাবদ্ধতার বিষয়টি নিয়ে আমি আসার পরপরই উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। কক্সবাজার পৌরসভা, উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, সড়ক ও জনপদ, পর্যটন ব্যবসায়ী, হোটেল মালিকসহ সবাইকে নিয়ে আমি জরুরি সভা করেছি। সবাই যার যার অবস্থান থেকে তার কাজগুলো সমন্বয়ভাবে করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। আশা করি খুব দ্রুত কাজ শুরু করা হবে। আমরা চেষ্টা করছি আগামী পর্যটন মৌসুমের আগেই সব কিছু সমস্যা সমাধান করার জন্য। সুত্র,: আমাদের সময়
পাঠকের মতামত