উখিয়া নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত: ১২/১০/২০২৪ ১:০৩ পিএম

কক্সবাজারের উখিয়ার জালিয়াপালং ইউনিয়নের সোনারপাড়ার গৃহবধূ রেজিয়া বেগম ওরফে বেবি (৫৮) ঢাকার গাবতলী থেকে নিখোঁজ হন। দীর্ঘ ৯ বছরেও তাঁর খোঁজ পায়নি পরিবার। পায়নি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কোনো সহযোগিতা। তবে স্বজনদের বিশ্বাস, রেজিয়া এখনো বেঁচে আছেন।

গত ২২ সেপ্টেম্বর পরিবারের সদস্যরা অন্তর্বর্তী সরকারের গুমসংক্রান্ত তদন্ত কমিশনের কাছে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। পরিবারের দাবি, এলাকার তিন ব্যক্তির প্ররোচনায় রেজিয়াকে গুম করেন র‌্যাবের সদস্যরা। রেজিয়াকে তাঁরা জীবিত অবস্থায় ফিরে পেতে চান।

আবেদনপত্রে স্বাক্ষর করেন রেজিয়ার ছেলে সাজেদুল কবির। তিনি কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির আইন বিভাগের ছাত্র। সাজেদুল কবির বলেন, ২০১৫ সালের ২২ সেপ্টেম্বর রাতে ঢাকা থেকে কক্সবাজার ফেরার পথে গাবতলীর শ্যামলী পরিবহনের একটি বাস থেকে সাদাপোশাকধারী সাতজন (পাঁচজন পুরুষ ও দুজন নারী) আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য পরিচয় দিয়ে তাঁর মা রেজিয়া ও সপ্তম শ্রেণিতে পড়ুয়া ছোট বোন আফসানা নুরী আলেয়াকে (১১) চোখ বেঁধে ও হাতকড়া পরিয়ে তুলে নিয়ে যান। এক দিন পর নুরীকে চলন্ত গাড়ি থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেওয়া হলেও মাকে গুম করা হয়। এখন পর্যন্ত মায়ের খোঁজ নেই। গুমের ঘটনায় উখিয়ার তিন মানব পাচারকারী জড়িত।

একই অভিযোগ করেন সাজেদুলের বাবা নুরুল কবির। তিনি বলেন, ‘তাঁর স্ত্রী রেজিয়া হোমল্যান্ড লাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানির কক্সবাজার শাখার ব্রাঞ্চ ম্যানেজার ছিলেন। অফিসের কাজে তিনি ঢাকায় গিয়েছিলেন। রাতে বাড়ি ফেরার পথে তিনি গুম হন। দীর্ঘ ৯ বছর বিভিন্ন জায়গায় খোঁজ নিয়েছি, সন্ধান মেলেনি।’ স্ত্রীকে উদ্ধারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে ধরনা দিয়েছেন, সহযোগিতা পাননি। নুরুল কবিরের দাবি, রেজিয়া এখনো জীবিত আছেন। হয়তো রাজধানীর আয়নাঘরের মতো কোনো গোপন আস্তানায়।

গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে। এরপর অন্তর্বর্তী সরকার গুমের ঘটনা অনুসন্ধানে তদন্ত কমিশন গঠন করে।

হিউম্যান রাইটস ডিফেন্ডার ফোরাম কক্সবাজার জেলা শাখার সভাপতি আইনজীবী আব্দুস শুক্কুর বলেন, কক্সবাজারে গুমের শিকার হয়েছেন, এমন চারজনের তথ্য তাঁদের আছে। এর মধ্যে উখিয়ার রেজিয়া বেগম একজন।

বাসে উঠেই পেটানো শুরু
গুমসংক্রান্ত তদন্ত কমিশনের কাছে করা অভিযোগপত্রে বলা হয়, ২০১৫ সালের ২১ সেপ্টেম্বর রেজিয়া মেয়ে আফসানা নুরী ও ভাই শাহজালালকে সঙ্গে নিয়ে উখিয়া থেকে ঢাকা যান। ২২ সেপ্টেম্বর সকালে ঢাকায় পৌঁছার পর শাহজালাল নিজের কাজে চলে যান। রেজিয়া মেয়েকে নিয়ে হোমল্যান্ড লাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানির কার্যালয়ে যান।

রাত আটটার দিকে রেজিয়া মেয়েকে নিয়ে গাবতলীর শ্যামলী পরিবহন কাউন্টারে গিয়ে টিকিট কেটে বাসে ওঠেন। কয়েক মিনিটের মাথায় বাসে ওঠেন সাদাপোশাকের সাতজন নারী-পুরুষ। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর লোক পরিচয় দিয়ে তাঁরা প্রথমে রেজিয়াকে এবং পরে মেয়ে নুরীকে চোখ বেঁধে ফেলেন, তারপর হাতকড়া পরিয়ে দেন।

এরপর রেজিয়াকে সিট থেকে তুলে বাসের পেছনের সিটে নেওয়া হয়। তখন বাসের সাউন্ড সিস্টেমের আওয়াজ বাড়িয়ে সাদাপোশাকের লোকজন রেজিয়াকে বেদম পিটুনি শুরু করেন। রেজিয়া চিৎকার করলে তাঁর মুখ চেপে ধরে রাখা হয়। এরপর মা-মেয়েকে বাস থেকে নামিয়ে অন্য একটি গাড়িতে তুলে একটি ভবনে নেওয়া হয়। একটি কক্ষে সারা রাত দুজনকে ফেলে রাখা হয়। কক্ষ থেকে গাড়ির হর্নের শব্দ শোনা যেত। ওই কক্ষে রেজিয়াকে লাঠি দিয়ে পেটানো হয়।

চলন্ত গাড়ি থেকে ধাক্কা দিয়ে নিক্ষেপ
২৪ সেপ্টেম্বর রাত আটটার দিকে রেজিয়া ও নুরীকে পুনরায় একটি গাড়িতে তোলা হয়। নুরীর হাতে ধরিয়ে দেওয়া হয় ৮০০ টাকা; সঙ্গে একটি কাগজ, তাতে লেখা ছিল মা–বাবার নাম ও বাড়ির ঠিকানা। কিছুক্ষণ পর গাড়িটি কমলাপুর রেলস্টেশনের কাছাকাছি পৌঁছে গতি কমায়। তারপর চলন্ত গাড়ি থেকে ধাক্কা দিয়ে নুরীকে মাটিতে ফেলে দেওয়া হয়।

অভিযোগপত্রে বলা হয়, ভোরে সড়কের পাশের নালা থেকে নুরীকে অজ্ঞান অবস্থায় উদ্ধার করেন এক ব্যক্তি। তিনি নুরীকে কমলাপুর রেলস্টেশনে নিয়ে যান। সেখানে নুরীর জ্ঞান ফেরে। এরপর উখিয়ার বাড়িতে খবর পাঠানো হয়। পরে পরিবারের লোকজন ঢাকায় এসে নুরীকে নিয়ে যান।

স্বামী নুরুল কবির বলেন, রেজিয়া নিখোঁজ হওয়ার পর থেকে ঢাকার দারুস সালাম থানা ও উখিয়া থানায় পৃথকভাবে সাধারণ ডায়েরি করা হয়। র‌্যাব-২ ব্যাটালিয়ন, পুলিশের বিভিন্ন দপ্তরে যোগাযোগ করা হয়। রেজিয়ার সন্ধান দেয়নি কেউ। উল্টো ভয়ভীতি প্রদর্শন করা হয়। বিএনপি–সমর্থক হওয়ায় তাঁরা আওয়ামী লীগ সরকারের হয়রানির শিকার হন।

এ প্রসঙ্গে উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আরিফ হোসেন বলেন, রেজিয়া বেগম নামে উখিয়ার কোনো নারী গুম কিংবা নিখোঁজ থাকার তথ্য তাঁর জানা নেই। তিনি এ থানায় নতুন।

তবে এই থানার সাবেক এক ওসি বলেন, রেজিয়া ও তাঁর স্বামীর বিরুদ্ধে থানায় মানব পাচার ও মাদকের একাধিক মামলা রয়েছে। দুজনের সঙ্গে এলাকায় কিছু লোকের বিরোধ ছিল। সূত্র, প্রথম আলো

পাঠকের মতামত

কানাডায় স্ত্রী ও সন্তানকে রেখেই প্রতারণার মাধ্যমে বিয়ের পিড়িতে চকরিয়া নুর!

কক্সবাজারের টেকনাফ রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আশ্রয় নেওয়া পরবর্তীতে কানাডায় বসবাসরত নুর বেগম নামের এক মহিলাকে বিয়ের ...

সিইসির মা-বাবার সমস্ত সম্পদ দিয়ে কক্সবাজারে গড়ে তোলা হয়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান

তোফায়েল আহমদ, কক্সবাজার:: কক্সবাজারের কুতুবদিয়া দ্বীপের গর্বিত সন্তান এ এম এম নাসির উদ্দীন ১৯৬৮ সালে ...

যুগান্তরের প্রতিবেদন শঙ্কার মাঝেও কক্সবাজারে বাণিজ্য মেলার অনুমতি, প্রধান সমন্বয়ক আ.লীগ নেতা!

ডিসেম্বরে কোথাও বাণিজ্য মেলার অনুমতি দেওয়া হয়নি। তবে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন এবারও শিল্প ও বাণিজ্য ...