দেশের পর্যটন খাতের উন্নয়ন এবং আন্তর্জাতিকমানের সেবা প্রদানের লক্ষ্যে বিদেশি পর্যটকদের জন্য ট্যুরিস্ট সিম চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা-বিটিআরসি এ বিষয়ে কমিশন বৈঠক করে চূড়ান্ত উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।
বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রচুর বিদেশি নাগরিক আসেন। এদের মধ্যে অনেকেই আসেন কেবল পর্যটক হিসেবে, আবার অনেকে আসেন ব্যবসায়িক বা দাফতরিক কাজে। বাংলাদেশে অবস্থানকালে এসব বিদেশি নাগরিকের নিজ দেশের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের জন্য সিম কার্ডের প্রয়োজন হয়। বিদেশি নাগরিকরা তাদের পাসপোর্টের বিপরীতে সিম রেজিস্ট্রেশন করে থাকেন।
বিশ্বব্যাংকের একটি প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ২০১৯ সালে প্রায় ৩ লাখ বিদেশি নাগরিক বাংলাদেশে এসেছিলেন। এছাড়া সিম রেজিস্ট্রেশনের তথ্য থেকে জানা গেছে, গত এক বছরে ৩১ হাজার ৩৫৪টি সিম বিদেশি পাসপোর্টের বিপরীতে নিবন্ধন করা হয়েছে। এই পরিসংখ্যান থেকে ধারণা করা হয়, বাংলাদেশে আসা বিদেশি নাগরিকরা বাংলাদেশি সিম কিনতে আগ্রহী হন না। অথচ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে পর্যটকদের জন্য বিশেষায়িত ট্যুরিস্ট সিম রয়েছে, যা ভ্রমণরত পর্যটকদের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়।
বিটিআরসি বলছে, বিদেশি নাগরিকরা সিম রেজিস্ট্রেশন করলে বিভিন্ন ধরনের সমস্যাও হয়। এসব সমস্যার মধ্যে রয়েছে— বিদেশি নাগরিকরা তাদের পাসপোর্টের বিপরীতে সিম নিবন্ধন ও ব্যবহার করে বালাদেশ থেকে চলে গেলে, সেই সিমটি অব্যবহৃত থেকে যায়। সেই সিম থেকে অপারেটরদের কোনও রাজস্ব আদায় হয় না। বিদেশি নাগরিকরা স্বল্প সময়ের জন্য সিম ব্যবহার করে বাংলাদেশ থেকে চলে গেলে নির্দেশনার শর্তমতে, অপারেটর ৫৪০ দিনের মধ্যে ওই সিম অন্য কারও নামে পুনরায় রেজিস্ট্রেশন করতে পারে না। ট্যুরিস্ট সিম না থাকায় অপারেটররা বিদেশি নাগরিকদের জন্য কোনও বিশেষ প্যাকেজ বাজারে ছাড়তে পারে না। বিদেশি নাগরিকরা বাংলাদেশ থেকে চলে গেলে বিদ্যমান নির্দেশনা অনুযায়ী, সিমটি ভিসার মেয়াদ বা সর্বোচ্চ ৬ মাস সচল থাকে। এই সময়ে সিমটি কোনও অসাধু ব্যক্তির হাতে পড়লে ওই সিম দিয়ে বিভিন্ন ধরনের অপরাধ সংঘটনের আশঙ্কা থাকে। এজন্য বিটিআরসি ট্যুরিস্ট সিম প্রবর্তনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
বিটিআরসির ২৬৯তম কমিশন বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে—মোবাইল অপারেটরদের অনুকূলে বরাদ্দকৃত নম্বর সিরিজ থেকে একটি সুনির্দিষ্ট ব্লকে নির্দিষ্ট সংখ্যক নম্বর ট্যুরিস্ট সিম হিসেবে ব্যবহৃত হবে। এই ব্লকের বাইরে কোনও বিদেশি নাগরিক বা পর্যটকের ব্যবহারের জন্য ট্যুরিস্ট সিম বরাদ্দ করা যাবে না। ৭, ১৫ বা ৩০ দিনের মেয়াদে ট্যুরিস্ট সিম দেওয়া যাবে। ৩০ দিন পরে বাধ্যতামূলকভাবে বিদেশি নাগরিক বা পর্যটকদের অনুকূলে রেজিস্টার্ড সিম ডি-রেজিস্টার্ড হয়ে যাবে। অপারেটররা ডাটা, ভয়েস, এসএমএস প্যাকেজ অফার করতে পারবে। এছাড়া আরও কোনও প্যাকেজ অফার করা যাবে না। প্যাকেজ অফার করার আগে বিটিআরসি থেকে অনুমোদন করিয়ে নিতে হবে। এসব প্যাকেজ নিয়মিত প্যাকেজের অন্তর্ভুক্ত হবে না। একটি পাসপোর্টের বিপরীতে সব অপারেটর মিলিয়ে সর্বোচ্চ দুটি ট্যুরিস্ট সিম নিবন্ধন করা যাবে। বিদেশি নাগরিকরা চাইলে ই-সিমও নিতে পারবেন। বিমান, স্থল বা নৌবন্দর তথা দেশের সব পোর্ট অব এন্ট্রিতে বিটিআরসি থেকে অনুমোদিত মোবাইল অপারেটরের সুনির্দিষ্ট রিটেইলার এবং সারাদেশে মোবাইল অপারেটরগুলোর নিজস্ব কাস্টমার কেয়ার সেন্টারে ট্যুরিস্ট সিম নিবন্ধন করা যাবে।
এ বিষয়ে রবি’র চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অফিসার সাহেদ আলম বলেন, ‘এ বিষয়ে কনসালটেশন চলছে। কিছু বিষয় ক্লিয়ার হওয়া প্রয়োজন। বিষয়গুলো ক্লিয়ার হলে আমরা এ বিষয়ে উদ্যোগী হবো।’
জানতে চাইলে বাংলালিংকের হেড অব করপোরেট কমিউনিকেশনস অ্যান্ড সাস্টেনেবিলিটির আংকিত সুরেকা বলেন, ‘পর্যটক সিম চালু করার এই উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানাই। বিটিআরসি থেকে এখনও এ বিষয়ে কোনও নির্দেশনা আমাদের কাছে আসেনি। নির্দেশনা পাওয়া মাত্রই আমরা সব ধরনের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবো।’ সুত্র: বাংলাট্রিবিউন