হ্নীলায় ব্যবসায়িক ও রাজনৈতিক বিরোধ এবং আধিপত্য বিস্তারের জেরধরে সংঘবদ্ধ একটি গ্রæপ মোটাংকের বিনিময়ে ভাড়াটে সন্ত্রাসী দিয়ে এক ব্যক্তিকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। এরপর পালিয়ে যাওয়ার সময় জনতার সহায়তায় অপহরণকারী চক্রের ৩জন ভাড়াটে সদস্য আটক হলেও শেষ পর্যন্ত অপহৃত ব্যক্তি ৪০লক্ষ টাকা মুক্তিপণের বিনিময়ে প্রাণে রক্ষা পায়। এই ব্যাপারে নামীয় ৯জন এবং অজ্ঞাতনামা ১০/১২ জনকে আসামী করে মামলা দায়ের করা হলেও ঘটনার সাথে সংশ্লিষ্ট অপহরণ ও খুন করে লাশ গুম চক্রান্তের মূলহোতারা এখনো আইনের আওতায় না আসায় ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
৩০ জুলাই বিকাল ৪টারদিকে উপজেলার হ্নীলা পূর্ব লেদায় দূধর্ষ অপহরণ ও ৪০লক্ষ টাকা মুক্তিপণ দেওয়ার পর প্রাণে রক্ষা পাওয়া মৃত লাল মিয়ার পুত্র ভিকটিম জাহাঙ্গীর আলমের বাড়িতে স্থানীয় জনসাধারণ, গণ্যমান্য ব্যক্তি ও মিডিয়া কর্মীদের উপস্থিতিতে জানানো হয়, গত ১৬ জুলাই রাত ১১টারদিকে আমি বেশ কয়েকজন বন্ধুসহ পূর্ব লেদার আবু তাহেরের বাড়িতে গল্পরত অবস্থায় ছিলাম। হঠাৎ মাস্ক পরা স্বশস্ত্র একদল লোক এসে প্রশাসন পরিচয়ে আমাকে ডেকে নিয়ে যায়। স্থানীয় মোস্তাক আহমদ সওদাগরের বাড়ির সামনে দাড়ানো নোহা গাড়িতে জোরপূর্বক তোলার চেষ্টা করে। এসময় গাড়িতে থাকা বোরহানের গাড়ি চালক মোচনীর সোলতান আহমদ টোকাইয়া, পূর্ব রঙ্গিখালীর ইয়াসিন আরফাত, গাজী পাড়ার শাহ আলম ও আবছারসহ আরো কয়েকজনকে দেখতে পায়। আমি গাড়িতে উঠতে না চাইলে বন্দুকের বাট ও টর্চলাইট দিয়ে মাথায় আঘাত করে জোর করে গাড়িতে তুলে স্বশস্ত্র পাহারায় নাটমোরা পাড়া হয়ে হ্নীলা ইউনিয়ন কমপ্লেক্সের রাস্তা দিয়ে উলুচামরী পাহাড়ি ছড়ার মাথায় ডাকাত দলের হাতে নামিয়ে দিয়ে যায় আমাকে খুন করে লাশ গুম করার জন্য। এরপর গাড়িসহ আরো কয়েকজন পালিয়ে যাওয়ার সময় হ্নীলা ষ্টেশন হতে পশ্চিম লেদার হোছন আহমদের পুত্র এবং অপহরণে ব্যবহৃত গাড়ির চালক মহিব উল্লাহ (২৪) কে তুলে নিয়ে কক্সবাজারের দিকে পালিয়ে যাওয়ার সময় হোয়াইক্যং নয়াবাজারে প্রধান সড়কে ব্রিগেট বসিয়ে মোচনীর তাজর মুল্লুকের পুত্র সোলতান আহমদ প্রকাশ টোকাইয়া (৪৫), কক্সবাজার খরুলিয়ার সব্বির আহমদের পুত্র মোঃ রাশেদুল (২৫) এবং পশ্চিম লেদার হোছন আহমদের পুত্র মহিব উল্লাহ (২৪)কে আটক করা হয়। তখন জনতার রোষানলে পড়ে গণধোলাইয়ের শিকার হওয়ার ভয়ে বোরহান উদ্দিন ও নুরুল হুদা মেম্বার গং মিলে মোটাংকের মিশন নিয়ে এই ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটিয়েছে বলে উপস্থিত লোকজনের সামনে স্বীকার করে। পরে তাদের আইন-শৃংখলা বাহিনীর হাতে তুলে দেওয়া হয়। ডাকাত দলের একটি গ্রæপ ফোনে তা ডাকাত দলের ৩জন সদস্য আটক হওয়ার বিষয়টি জানিয়ে দেন। এরপর পাহাড়ের স্বশস্ত্র ডাকাত দল আমাকে নিয়ে পাহাড় বেয়ে গাজীপাড়ার পশ্চিমে স্থানীয় মৃত আব্দুল মজিদ প্রকাশ ভোলাইয়া বৈদ্যের ছেলে আবুল আলমের পেয়ারা বাগানে উপরে পাহাড়ে নিয়ে অবস্থান করে।
পরদিন ১৭ জুলাই আমার বড় ভাই ও ৮নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহাম্মদ আলম বাদী হয়ে অপহরণের জড়িত পশ্চিম লেদার মৃত নুরুল ইসলামের পুত্র বোরহান উদ্দিন (৪০), পশ্চিম লেদা শিয়াইল্যাঘোনার মৃত হামিদ আলীর পুত্র আব্দুস শুক্কুর (৫০), রঙ্গিখালী লামার পাড়ার মোঃ ইউনুছের পুত্র মোঃ ইয়াসিন আরাফাত (৩০), পূর্ব রঙ্গিখালী স্কুল পাড়ার দুদু মিয়ার পুত্র মোঃ জাকের (৩০), পূর্ব লেদার আশরাফুজ্জামানের পুত্র জাফর আলম প্রকাশ বাঘকাটা জাফর (৫৫), দক্ষিণ আলীখালীর আজম উল্লাহর পুত্র মোঃ রফিক (২৮), পশ্চিম লেদার হোছন আহমদের পুত্র মহিব উল্লাহ (২৪), মোচনীর তাজর মুল্লুকের পুত্র সোলতান আহমদ প্রকাশ টোকাইয়া (৪৫) ও কক্সবাজারের খরুলিয়ার সব্বির আহমদের পুত্র মোঃ রাশেদুল (২৫) কে নামীয় এবং আরো ১০/১২ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামী করে মামলা দায়ের করা হয়।
পরদিন সকালে ডাকাত দলের সদস্যদের ধরতে আমার ভাইয়েরাসহ লোকজন ডাকাতদের আতœীয়-স্বজনের বাড়িতে যাওয়ার খবর পেয়ে আমাকে জীবিত ফেরত দিতে প্রথমে ২কোটি টাকা মুক্তিপণ দাবী করে। এরপর ১কোটি ৮০লাখ টাকা, পরে দেড় কোটি, সর্বশেষ ১কোটি টাকা দাবী করলেও নিরুপায় হয়ে ৫০লাখ টাকায় এসে থামেন। শেষ পর্যন্ত দর কষাকষিতে আমার ভাইয়েরা আমাকে প্রাণে বাঁচাতে ধার-কর্জ্জ করে ৪০লাখ টাকার বিনিময়ে ১৮জুলাই এশারের সময় রঙ্গিখালী শাহ আজমের খামারের দক্ষিণ-পশ্চিম পাশে আলীখালী ২৫নং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের লাইট চিহ্নিত করে পথ ধরে হেঁটে বেরিয়ে যেতে বলে এবং ভিকটিমের পরিবারের লোকজনকে কোন পথ দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে জানালে লোকজন গিয়ে আমাকে উদ্ধার করে বাড়িতে নিয়ে আসে। এরপর হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য প্রেরণ করা হয়। দীর্ঘদিন চিকিৎসা শেষে আপনাদের ডেকে এলাকার চিহ্নিত মাফিয়া, ভাড়াটে খুনী এবং অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায় চক্রের তথ্য জানালাম।
ভিকটিম জাহাঙ্গীর আরো জানান,বিগত ইউপি নির্বাচনে আমার ভাই মেম্বার পদে নির্বাচনের বিরোধ, স্থানীয় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের কাউন্সিল নিয়ে রাজনৈতিক দ্বন্দ এবং লেদা ব্রীকফিল্ডে ফুলের ডেইলের মরহুম হাজী সোলতান আহমদ সওদাগরের জমি ওয়ারিশগণের নিকট হতে ক্রয়ের চুক্তিনামা, আমার ভাই জাফর আলমের শেয়ারে ব্রিকফিল্ড ব্যবসা আমি লীজ নিয়ে চালানো, আমেরিকা কামালের জমি বিরোধের সালিশ এবং চিহ্নিত মহলের আধিপত্য বিস্তারে বাঁধা হয়ে দাড়ায় পশ্চিম লেদার মৃত নুরুল ইসলামের পুত্র বোরহান উদ্দিন, মৃত হাজী আবুল কাশেমের পুত্র নুরুল হুদা মেম্বার, নুরুল কবির ও মৃত গবী সোলতানের পুত্র মোস্তাক আহমদ সওদাগরসহ একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট মিলে গোপন বৈঠক করে মোটাংকের বিনিময়ে ভাড়াটে সন্ত্রাসী দিয়ে অপহরণ করে আমাকে খুন করতে চেয়েছে। যা তাদের অনেক সদস্য বিভিন্ন বৈঠকে স্বীকার করেছে। আমি এসব মুখোশধারী খুনি ও মাফিয়া ডনদের দ্রæত আইনের আওতায় আনার দাবী জানাচ্ছি।