অর্থসংকট দেখিয়ে কক্সবাজারে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের খাদ্য বরাদ্দ দুই দফা কমিয়েছে জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি)। বরাদ্দ কমায় ক্যাম্পে দিন দিন বাড়ছে আর্থ-সামাজিক অস্থিরতা। নানা ধরনের অপরাধে জড়াচ্ছেন রোহিঙ্গারা। এতে উদ্বিগ্ন স্থানীয় বাসিন্দারা।
চলতি বছর দুই দফা কমানো হয়েছে রোহিঙ্গাদের রেশন বরাদ্দ। প্রথম দফায় গত ১ মার্চ রেশন বরাদ্দ ১২ ডলার থেকে কমিয়ে করা হয় ১০ ডলার। দ্বিতীয় দফায় ১ জুন থেকে আরও ২ ডলার কমিয়ে করা হয় আট ডলার।
আশ্রয়শিবিরগুলোতে অস্থিরতা ও বিশৃঙ্খলা আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। তাদের মতে, মাদকদ্রব্য ও অস্ত্র চোরাচালান এবং অসামাজিক কার্যকলাপ বাড়বে। একই ধরনের আশঙ্কা করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও। সম্প্রতি মন্ত্রণালয়ের আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়, রোহিঙ্গাদের মধ্যে পুষ্টিহীনতা বাড়তে পারে। এমনকি তাদের জনস্বাস্থ্য হুমকির মুখে পড়তে পারে। ওই সভার পর খাদ্যসহায়তা বাড়াতে জাতিসংঘের প্রতি আহ্বান জানিয়ে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে। একই সঙ্গে রোহিঙ্গাদের খাদ্যসহায়তা ও তাদের পেছনে মাসিক ও বার্ষিক ব্যয়সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদনও পাঠানো হয়েছে জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা-ইউএনএইচসিআরে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, রোহিঙ্গাদের যে আন্তর্জাতিক সহায়তা দেওয়া হচ্ছে, তা চলতি বছর দুই ধাপে কমানো হয়েছে। সহায়তার এ হার আরও কমে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। খাদ্য বরাদ্দ কমানোর ফলে রোহিঙ্গাদের সার্বিক দুর্গতি ও অপরাধপ্রবণতা বাড়বে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। যার একটা বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়বে পুষ্টি-স্বাস্থ্যসহ সার্বিক জীবনযাত্রায়। সভায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব মো. মোস্তাফিজুর রহমান জানান, খাদ্যসহায়তা কমানো হলে শরণার্থীরা কাজের সন্ধানে মরিয়া হয়ে উঠবে। ক্যাম্পে তাদের রাখা কঠিন হয়ে পড়বে। কারণ ক্যাম্পের মধ্যে কাজের সুযোগ নেই। ফলে ক্যাম্প থেকে পালিয়ে যাওয়ার প্রবণতা বাড়বে। ইতোমধ্যে ক্যাম্প থেকে অনেকেই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ট্রলারে সাগরপথে বিভিন্ন দেশে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। এতে অনেকেই মৃত্যুমুখে পতিত হচ্ছেন। মিয়ানমারে ফেরা নিয়ে অনিশ্চিয়তার কারণে রোহিঙ্গারা মাদকপাচারসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পড়ছেন। এ জন্য তাদের বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এ বিষয়ে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় ভূমিকা পালন করতে পারে।
সভায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. কামরুল হাসান জানান, রোহিঙ্গা পরিবারে দাতা দেশগুলো থেকে প্রতিশ্রুত অর্থ আসছে না। এ অবস্থা চলতে থাকলে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের সার্বিক অবস্থা আরও নাজুক হবে। তিনি আরও বলেন, সস্তা শ্রমের কারণে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা রোহিঙ্গাদের তাদের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ দিচ্ছে। এতে স্থানীয় জনগণের মধ্যেও বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হচ্ছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, বর্তমানে কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩ আশ্রয়শিবিরে নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা সাড়ে ১২ লাখ। এর মধ্যে আট লাখ এসেছে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পরে। সুত্র, দৈনিক আমাদের সময়
পাঠকের মতামত