কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফে স্মরণ কালের ভয়াবহ পাহাড়ি বর্ষণ, ভূ-কম্পন, পাহাড় ধ্বস ও বন্যার পানিতে ডুবে, পাহাড়ে ও বসত-বাড়ির দেওয়াল চাপা পড়ে ৪৮ জনের মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটলেও এখনও পাহাড়ের পাদদেশে উখিয়া-টেকনাফে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাস করছে লক্ষাধিক মানুষ। গত ৩ দিনের ভারী বর্ষণে আবারও পাহাড় ধ্বসের আশংকা করছে স্থানীয় লোকজন। ২০১০ ও ১২ সালের স্মরণ কালের ভয়াবহ পাহাড় ধ্বস ও ভূমিকম্পনের ঘটনায় এ করুণ মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছিল। উপজেলা প্রশাসন বিগত বছরগুলোর করুণ ট্র্যাজেডি স্মরণ করেও পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারীদের নিরাপদে সরিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে প্রচারণা চালালেও এবার পাদদেশে বসবাসকৃত লোকজনদেরকে সরিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে প্রশাসনের কোন তৎপরতা দেখা যায়নি।
জানা গেছে, উখিয়া-টেকনাফের বিভিন্ন এলাকায় যত্রতত্র ভাবে পাহাড় কাটা ও বসতি নির্মাণ করে পাহাড়ের ঢালু ও পাদদেশে বসবাস করছে লক্ষাধিক মানুষ। আর এভাবে পাহাড় কেটে বসতি স্থাপন চলতে থাকলে আগামীতে আরো বড় ধরনের প্রাকৃতিক দূর্যোগে ব্যাপক প্রাণহানির আশংকা করছে স্থানীয়রা। বিগত ২০১০ সালের ১৪ জুন সকাল থেকে রাতভর টানা বর্ষণ স্থায়ী হয়ে ১৫ জুন ভোর রাতের দিকে ভূ-কম্পন হলে বৃষ্টিপাতের মাত্রা প্রবল আকার ধারণ করে টেকনাফে ৩৩ জন ও উখিয়ায় ২০১০ ও ১২ সালের টানা বর্ষণে হলদিয়া পালং, পালংখালী, জালিয়া পালং ও রতœাপালং ইউনিয়নের পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারী লোকজনের বাড়ির দেয়াল ধ্বসে ১৫ জন নারী-শিশু ও পুরুষ নিহত হয়েছিল। টেকনাফ উপজেলার হোয়াইক্যং, হ্নীলা, টেকনাফ সদরে পাহাড় ধ্বসে পাদদেশে বসবাসরত জনতার বসত-বাড়ীর উপর পাহাড় ধ্বসে পড়লে এ ট্রাজেডির ঘটনা ঘটেছিল। এসময় টেকনাফ পৌর এলাকার পুরাতন পলান পাড়ার ফকিরামুরা নামক এলাকার ৩ পরিবারের মোঃ হাসেমের মেয়ে কুলসুমা আকতার (৭), নুর কলিমা (৩), আব্দুল জলিলের স্ত্রী শাহিনা আক্তার (৩০), পুত্র আব্দুর রাজ্জাক (১১), মেয়ে শিউলি আক্তার (৮), শামীমা আক্তার (৫), মোহাম্মদ শফির স্ত্রী বেলুজা খাতুন (৩০), ও শিশু পুত্র পুতিন্ন্যা (২), হ্নীলা পশ্চিম সিকদার পাড়া (মুরা পাড়া) এলাকার নুর মোহাম্মদ (৩৫), লায়লা বেগম (২৮), নাছিমা আক্তার (৫), ১০ মাসের শিশু পুত্র নুরুল আবছার, রঙ্গিখালী কোনার পাড়া এলাকার সোলতান আহমদের পুত্র প্রতিবন্ধী নুরুন্নবী (২৫), হোয়াইক্যং ইউনিয়নের আমতলীর সাবেক ইউপি মেম্বার কর্বি আহমদ চৌধুরীর স্ত্রী নাজমা (৩৫), ২ সন্তান আব্দুলাহ ফায়সাল (১৫), ইমতিয়াজ হাসান (২), দিলীপ বড়–য়া (৪২), স্ত্রী সেবিকা বড়–য়া (৩২), মুজিবুর রহমানের ২ সন্তান শাবনুর (৩), সাঈদুর রহমান (১), হোয়াইক্যং এর নজির আহমদের বাড়ীতে বেড়াতে আসা সিলেট বামই হবিগঞ্জ এলাকার মুজিবুল হক (৪২), আব্দুল জব্বার প্রকাশ কালূ খলিফা (৮০), তার পুত্রবধু দেলোয়ারা (২৬), নাতী ইব্রাহীম (৩), কাটাখালীর কবির আহমদের পুত্র মো: আলম (৪), কেরুনতলী এলাকার ছৈয়দ আলমের পুত্র (১৪), সরোয়ারের স্ত্রী মরিয়ম (৪০), পুত্র সন্তান গোলাম আকবর (১০), আলী আকবর (১২), কন্যা মর্জিনা (১২), লম্বাবিল এলাকার রশিদ আহমদের স্ত্রী সাবেকুন্নাহার (২৫), কন্যা ইসমত আরা (৩), ওমর মিয়া (৪০) প্রমুখ নিহত হয়। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের স্বরণ ও আতœীয়-স্বজনদের সান্তনা দেওয়ার কেউ নেই। এ কারণে নিহতের পরিবারদের মাঝে চাপা অভিমানের সুর বাজছিল। এখনো টেকনাফের প্রত্যন্ত এলাকার পাহাড়ী জনপদে পাহাড় কর্তন ও জনবসতি অব্যাহত রয়েছে। প্রবল বর্ষণে আরো প্রাণহানির আশংকা রয়েছে
উখিয়ার ইনানী বন রেঞ্জের আওতায় মনখালী, ছেপটখালী, জুম্মা পাড়া, মোঃ শফির বিল, ইনানী জুমের ছড়া, সোনাই ছড়ি, পাইন্যাশিয়া, তুতুরবিল, হরিণমারা, তেলখোলা, মোছারখোলা, হাতির ঘোনা, মধুর ছড়া, মাছকারিয়া, দোছড়ি, থিমছড়ি, তুলাতলী, সোনার ঘোনা, ডেইল পাড়া, পাগলির বিল পাহাড়ের উপরে, ঢালুতে ও নিচে অবৈধভাবে বসবাস করছে প্রায় অর্ধ লক্ষাধিক পরিবার। ২০১০ সনের ১৫ জুন প্রবল বর্ষন পরবর্তী সৃষ্ট বন্যায় পালংখালী ইউনিয়নে থাইংখালী গ্রামে একই পরিবারের ৩জন, রাজাপালং ইউনিয়নের সাদৃকাটা গ্রামে ১জন ও ছেপটখালী গ্রামে ১জন সহ ৫ জন নিহত ও অর্ধশতাধিক নারী, পুরুষ ও শিশু পাহাড় ধ্বসে ঘর ছাপা পড়ে আহত হয়েছিল। ২০১১ সালে জুন মাসে জালিয়া পালং ইউনিয়নের সোনাইছড়ি গ্রামে পাহাড় ধ্বসের ঘটনায় এলাকার জনমনে আতংকের সৃষ্টি হলেও দারিদ্রতার অশ্বপৃষ্টে বাধা এসব পরিবারগুলো স্থান পরিবর্তন করতে পারেনি বলে স্থানীয় জনসাধারণের অভিমত।
সর্বশেষ ২০১২ সালের জুন মাসে এ উপজেলার হলদিয়া পালং, সোনার ঘোনা ও রতœাপালং ইউনিয়নের তুলাতলী গ্রামে পাহাড় ধ্বসে ঘর ছাপা পড়ে একই পরিবারের ৪জন সহ ১০ জন নারী পুরুষ শিশুর মর্মান্তিক মৃত্যু হয়। উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মাঈন উদ্দিন জানান, পাহাড়ের পাদদেশে যারা অবৈধ ভাবে বসবাস করছে তাদেরকে সরে যাওয়ার জন্য বারবার বলা হয়েছে এবং স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে তাদেরকে মাইকিংও করা হয়েছে। । টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শফিউল আলম বলেন, অবিরাম ভারী বর্ষনের ফলে পাহাড় ধ্বসের আশংকায় পাহাড়ের ঢালু ও পাদদেশে বসবাসকারী লোকজনকে নিরাপদে সরে যাওয়ার জন্য মাইকিং যোগে সতর্ক করা হয়েছে।