প্রকাশিত: ১৯/০৩/২০১৯ ১১:৪৫ এএম

ফিচার ডেস্ক::
থাইল্যান্ড ভ্রমণ পিপাসুদের কাছে এক স্বপ্নের দেশ। প্রতিবছর অসংখ্য পর্যটক যান এখানে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ঘুরে দেখার পাশাপাশি এখানে রয়েছে অ্যাডভেঞ্চারের রকমারি আয়োজন। কোথাও সাগরতলে স্কুবা ডাইভিং তো আবার কোথাও প্যারাস্যুটে চেপে আকাশভ্রমণ। সব আয়োজনই আছে এখানে।
দেশটির ভিসার জন্য সরাসরি থাই এম্বেসিতে গিয়ে আবেদন করতে পারবেন না। তাই কোনো এজেন্সির মাধ্যমে করাই ভালো। এজেন্সিগুলো সাধারণত চার হাজার টাকা নেয়। আপনার ভিসার আবেদনের জন্য পাসপোর্ট জমা দেয়ার পর থাই এম্বেসি থেকে আপনাকে ফোন করা হবে। তারপর সাধারণ কিছু প্রশ্ন করবে। যেমন আপনি কত দিনের জন্য যাবেন, স্টুডেন্ট হলে আপনার আইডি কার্ডের নাম্বার ইত্যাদি। সমস্যা হচ্ছে থাই এম্বেসি থেকে একবারই ফোন করা হবে। ফোন রিসিভ করতে না পারলে ভিসা না পাওয়ার সম্ভবনা প্রায় শতভাগ।

ভিসা হয়ে গেলে ঢাকা থেকে ব্যাংকক যাবেন বিমানে। ঢাকা টু ব্যাংকক রিটার্ন বিমান ভাড়া ২১ হাজার টাকা থেকে শুরু। বিমানবন্দরে পৌঁছেই কিছু ডলার থাই মুদ্রায় ভাঙ্গিয়ে নিন এবং ট্রাভেল সিমও সংগ্রহ করুন। এয়ারপোর্টের ভেতর থেকেই ট্রেন আছে যা ব্যাংককের যে কোনো জায়গায় নিয়ে যাবে ট্যাক্সির অনেক আগে। খরচও অনেক কম।

ব্যাংককে দেখার মতো খুব বেশি কিছু নেই, আবার কমও নেই! আন্ডার ওয়াটার ওর্য়াল্ড, বুদ্ধ ধর্মের উপাসনালয়, চাতুচাক মার্কেট, এমবিকে, ফ্লোটিং মার্কেট এইসব খুবই জনপ্রিয় জায়গা। ব্যাংককে চলাচলে সবসময় ওদের স্কাই ট্রেন ব্যাবহার করা উচিত, ট্যাক্সি ড্রাইভাররা অতিরিক্ত ভাড়া হাঁকায়। ব্যাংকক ঘোরা জন্য একদিনই যথেষ্ট। তারপরই বাসে যেতে পারেন পাতায়া, ভাড়া ১২০ বাত ও যেতে সময় লাগে ২ ঘণ্টা। যাওয়ার আগে অবশ্যই বুকিং.কম থেকে হোটেল বুক করে নেবেন। পাতায়ায় দেখার মতো জায়গা হল কোরাল আইল্যান্ড, রিপ্লিসের বিলিভ ইট অর নট, ওয়াকিং স্ট্রীট, ফ্লোটিং মার্কেট। ব্যাংকক পাতায়া ছাড়াও আপনি ফুকেট, ক্রাবি, ফি ফি আইল্যান্ডে যেতে পারেন।

পরের গন্তব্য কম্বোডিয়া ও লাওস

দেশে না ফিরে আপনার পরবর্তী গন্তব্য হতে পারে কম্বোডিয়া ও লাওস। বাংলাদেশী নাগরিকদের ব্যাংককে অবস্থিত দুই দেশের অ্যাম্বাসী থেকে ভিসা নিতে হবে। যদি থাইল্যান্ডের সিঙ্গেল এন্ট্রি ভিসা থাকে তাহলে ব্যাংকক গিয়ে ডাবল এন্ট্রি ভিসা করিয়ে নিতে হবে। নাহয় কম্বোডিয়া ও লাওসের ভিসা নাও মিলতে পারে। থাইল্যান্ডের ডাবল এন্ট্রি ভিসার জন্য ছবি, পাসপোর্টের ফটোকপি, ডিপারচার কার্ডের ফটোকপি নিয়ে এই ঠিকানায় (the govt immigration office bldg b, at chaengwattana, laksi, soi 7) যাবেন। এই অফিসের দেয়া আবেদনপত্র পূরণ করে জমা দিলে ১-২ ঘণ্টার মধ্যেই থাইল্যান্ডের ডাবল এন্ট্রি ভিসা পেয়ে যাবেন।

কম্বোডিয়া ও লাওসের ভিসার জন্য আপনাকে আগেই বিমানের টিকেট কাটতে হবে। রিজার্ভেশনে কনফার্ম লিখে নিয়ে যেতে হবে, ১০০ বাথ দিলেই সেটি ব্যাংককের ট্রাভেল এজেন্সিরা করে দিবে। থাইল্যান্ড থেকে দুই দেশেই স্থল পথে যাওয়া যায়, এমনকি নৌ পথেও, কিন্তু বাংলাদেশী নাগরিকদের আকাশপথই কম ঝুঁকি।

কম্বোডিয়ার ভিসার জন্য পাসপোর্ট, ছবি, বিমান টিকেট, ১০০০ বাথসহ দেশটির অ্যাম্বাসীতে যেতে হবে। সব জমা দিলে দেড় ঘণ্টার মাঝে ভিসা পেয়ে যেতে পারেন। লাওসের অ্যাম্বাসী কম্বোডিয়ার অ্যাম্বাসীর পাশে। লাওসের ভিসার জন্য পাসপোর্ট, ছবি, বিমান টিকেট, ৭০ ডলার বা সমপরিমাণ থাই বাথ সেখানে জমা দিলে ২ ঘণ্টার মধ্যে ভিসা পেয়ে যাবেন। তবে লাওস অ্যাম্বাসীতে ক্রেডিট কার্ড দেখতে চায় অনেক সময়, কাজেই সঙ্গে থাকলে অবশ্যই নিয়ে যাবেন।

লাওস ভ্রমণ

১৯৯০ সালের আগেও লাওস পর্যটকদের প্রবেশাধিকার দিত না। ফলে প্রাচ্যের দেশগুলোর লোকজনের জন্য তো বটেই, পশ্চিমারা বলতে গেলে দেশটির নামও শোনেনি আগে ঠিকমতো। তবে ১৯৯০ এর পর থেকে প্রচুর দর্শনার্থী আসা শুরু করে লাওসে। যদিও লাওস তার পার্শ্ববর্তী দেশ থাইল্যান্ডের মতো অত উন্নত নয়, তবুও লাওসের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যেই বিমোহিত হয়ে বর্তমানে প্রচুর পর্যটক এখানে বেড়াতে আসেন। প্রাকৃতিক রূপবৈচিত্র তো বটেই, পাশাপাশি সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যও লাওস ভ্রমণে পর্যটকদের উৎসাহী করে তুলেছে।

ব্যাংকক থেকে বাস, ট্রেন ও বিমানে করে লাওস যাওয়া যায়। খরচ বাঁচাতে চাইলে বাসে যেতে পারেন, সময় বাঁচাতে চাইলে বিমানে। বিমানে খরচ পড়বে ১০ হাজার টাকার মতো। দেশটিতে রয়েছে ‘দ্য গোল্ডেন স্টুপা অব ফা থাট লুয়াং’। এটা লাওসের জাতীয় প্রতীকের একটি। এছাড়া বুদ্ধা পার্ক, পবিত্র পাহাড় , কুয়াং সি জলপ্রপাত আছে দেখার মতো। লাওস থেকে আপনার পরের গন্তব্য হতে পারে কম্বোডিয়া। চাইলে থাইল্যান্ডও ফেরত যেতে পারেন।

কম্বোডিয়ায় ঘুরুন, তবে সাবধান!

ব্যাংকক থেকে ৪৫ মিনিটের ফ্লাইট, বিমান ভাড়া পড়বে ১০,০০০ টাকার মতো। দেশটির রাজধানী নমপেন শহরটি ছোট হলেও বেশ সাজানো গোছানো পরিষ্কার। সে দেশে উবারের মতই গ্র্যাব এবং পাসএপ নামক এপগুলো ব্যাবহার করে চাইলেই শহরের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে ঘুরে আসতে পারবেন। খরচও তুলনামূলক ভাবে কম। ৪-৫ ডলার দিয়ে বেশ ভালো ঘোরা যাবে। আর শহরের দর্শনীয় স্থানগুলোও মোটামুটি কাছাকাছি হওয়ায় ভাড়া খুব বেশী গুনতে হবেনা আপনাকে। তবে অটোরিক্সা এবং স্থানীয় গাইডদের থেকে সাবধান। ৫ ডলারের জায়গায় ১০০ ডলার পর্যন্ত হাঁকতে এরা দ্বিধা করেনা! বিদেশী কাউকে দেখলে সাধারণ দোকানিরাও বেশ দাম হাকায়।

নমপেন শহরটি মেকং নদীর তীরে অবস্থিত এবং শহরের মধ্যখান দিয়েই বয়ে গেছে নদী। নদীর দুই ধারে রয়েছে অসংখ্য রেস্টুরেন্ট, বার এবং পাব। যা কি-না আপনাকে কিছুটা হলেও পাতায়া কিংবা ফুকেটের ওয়াকিং স্ট্রিট গুলোর ফ্লেভার দিবে।

রাজধানী থেক বেশ দূরে অবস্থিত ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজের অন্তর্গত ‘অ্যাঙ্কর’, যেখানে আপনি খুজে পাবেন সে দেশের প্রাচীন সভ্যতার নিদর্শনগুলো। ৪-৫ হাজার টাকায় ৪৫ মিনিটের ফ্লাইটে সহজেই পৌছাতে পারবেন সিয়েম রিপ নামক শহরে এবং সেখান থেকে স্পটটিও বেশ কাছে। আর খাবারদাবার বেশ সুস্বাদু অনেকটা থাই খাবারের মতই এবং রাস্তার আশেপাশে খুঁজে পাবেন অনেক ধরনের খাবারের ফুড কোর্ট। ভোজন রসিকদের জন্য নমপেন হতে পারে এক অনন্য স্থান। আর যারা কম খরচে ব্যাগভর্তি শপিং করতে চান তাদের জন্য রয়েছে নাইট মার্কেট। মেয়েদের অর্নামেন্টস, জুতা, শো পিস, ঘড়ি থেকে শুরু করে নাইকি এডি্ডাসের রেপ্লিকা প্রোডাক্টসহ বিশ্বখ্যাত সবকিছুরই ডামি আইটেম আপনি সেখানে পেয়ে যাবেন অবিশ্বাস্য কম মূল্যে।

এবার চলুন ভিয়েতনাম

রথ দেখা আর কলা বেচার মত হাতে সময় থাকলে ঘুরে আসতে পারেন ভিয়েতনাম। রাজধানী নমপেন থেকে ভিয়েতনামের হো চি মিন শহর যেতে লাগে ৪-৫ ঘণ্টা, ভাড়া ৩০০০ টাকার একটু কম-বেশি। বাস ছাড়াও নদীপথেও বেশ ভালো সুযোগ রয়েছে যাওয়ার আর আকাশ পথ তো আছেই। একসঙ্গে কয়েকটি দেশ ঘুরার এ এক অন্যতম সহজ উপায়।

পাহাড়ের মুগ্ধতা, সমুদ্রের বিশালতা, পুরনো শহরের মায়া আর নতুন শহরের ঝলমলে আলোয় ঘেরা চমৎকার দেশ ভিয়েতনাম। দেশটিতে পা দেয়ার আগ পর্যন্ত আপনি ঠিক গুছিয়ে চিন্তা করতে পারবেন না যে কী অপেক্ষা করছে আপনার জন্য। অবশ্য পা দেওয়ার পর আরো বেশি এলোমেলো হয়ে যেতে পারেন! কোনটা বাদ রেখে কোনটা দেখবেন এই চিন্তায়। অসম্ভব সুন্দর সাজানো গোছানো দেশটির পরতে পরতে ছড়িয়ে আছে ভীষণ মুগ্ধতা।

ভিয়েতনামের পর্যটন ভিসা পাওয়া যায় খুব সহজেই। ভিয়েতনাম এমব্যাসি জানাচ্ছে, তিন উপায়ে ভিয়েতনামের ভিসার জন্য আবেদন করতে পারেন। এক. যেকোনো ট্র্যাভেল এজেন্সির মাধ্যমে কিংবা অনলাইনে আপনি ভিসার জন্য আবেদন করতে পারবেন। ৩ থেকে ৪ কার্য দিবসের মধ্যেই পেয়ে যাবেন ভিসা। দুই. ভিয়েতনাম এমব্যাসিতে সরাসরি গিয়ে আবেদন করা যাবে। তিন. অন অ্যারাইভাল ভিসার জন্য আবেদন করতে পারেন অনলাইনে। ফর্ম পূরণ করে ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে পেমেন্ট করার দুইদিনের মধ্যে অ্যাপ্রুভাল লেটার বা অনুমোদনপত্র চলে আসবে মেইলে। সেটি দেখালে ভিয়েতনাম এয়ারপোর্টে নেমেই মিলবে স্টিকার ভিসা।

সুত্র: ডেইলি-বাংলাদেশ ডটকম

পাঠকের মতামত

চট্টগ্রামে আমির খসরুসহ বিএনপির চার নেতার বাসায় হামলা-অগ্নিসংযোগ

প্রচ্ছদচট্টগ্রাম (মহানগর, উত্তর, দক্ষিণ) চট্টগ্রামে আমির খসরুসহ বিএনপির চার নেতার বাসায় হামলা-অগ্নিসংযোগ সিভয়েস২৪ প্রতিবেদক চট্টগ্রামে ...

পর্যটন শিল্পের অপার সম্ভাবনা কক্সবাজারের ন্যাশনাল পার্ক

বাংলাদেশের জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে যে প্রাকৃতিক বনভূমিগুলোকে সংরক্ষিত বনাঞ্চল হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। মেদাকচ্ছপিয়া জাতীয় উদ্যান ...