টেকনাফের স্থানীয় আওয়ামী লীগের সহসভাপতি এইচ কে আনোয়ার কালের কণ্ঠকে বলেন, এমপি বদির উত্থান আওয়ামী লীগের ভেতর থেকে নয়। তাই দলীয় নীতি-আদর্শ নিয়ে তিনি মোটেই চিন্তিত নন। তিনি মারধর, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি ও চোরাচালান করে দলকে তছনছ করে ফেলেছেন। টেকনাফ বন্দরকে এমপি বদি ব্যক্তিগত বন্দরে পরিণত করেছেন। তিনি বিএনপি ও জামায়াতের নেতা-কর্মীদের নিয়ে টেকনাফ বন্দর দখল করেছেন। এ ছাড়া তাঁর পরিবারের সদস্যরাও বন্দর ও ঘাটের সব বৈধ-অবৈধ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। তাঁর দাপটে আওয়ামী লীগের লোকজন কাছে ঘেঁষতে পারে না।’
আজ থেকে আট বছর আগে ২০১১ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর দৈনিক কালের কন্ঠের প্রধান শিরোনামে একটি সরেজমিন অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিল। সেই প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল-‘বদনামের শেষ নেই এমপি বদির।’ টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এবং আওয়ামী লীগ নেতা এইচ,কে আনোয়ার আজ আর বেঁচে নেই। তিনি মাত্র মাস তিনেক আগে ইন্তেকাল করেছেন। এলাকার দলীয় এমপি আবদুর রহমান বদিকে নিয়ে প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা এইচ,কে আনোয়ার উপরোক্ত কথা বলেছিলেন। যে নেতার কথাই আজ পরতে পরতে সত্য প্রমাণিত।
কালের কন্ঠে এমপি বদিকে নিয়ে সর্বপ্রথম প্রকাশিত এই প্রতিবেদনটি নিয়ে উখিয়া-টেকনাফ তিনি সরগরম করে তুলেছিলেন। সেই প্রকাশিত সংবাদটি নিয়ে ক্ষোভে ফেটে পড়েছিলেন এমপি বদি। প্রায় প্রতিদিনই কালের কন্ঠের সাংবাদিক তোফায়েল আহমদের (এই অধম) বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মিছিল, ঝাড়– মিছিল বের করা হত উখিয়া-টেকনাফ সংসদীয় আসনের নানা স্থানে। প্রতিটি মিছিলেই আমি অধমের কুশপুত্তলিকা দাহ করা হয়েছে। এমপি বদির সমর্থকরা এ রিপোর্ট নিয়ে কতইনা নাজেহাল করেছেন আমাকে। এভাবেই আমাকে রেহাই দেয়া হয়নি। শেষাবধি এই রিপোর্ট নিয়ে এমপি বদির ভাই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ১৫ নম্বরের ইয়াবা তালিকাভুক্ত ডন মৌলভী মুজিবুর রহমানকে দিয়ে কালের কন্ঠ’ সম্পাদক দেশের শীর্ষস্থানীয় কথা সাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলন সহ আমার বিরুদ্ধে মামলাও দায়ের করেন। একে একে ২ টি মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে আমাদের।
দীর্ঘ ৮ বছর পর কালের কন্ঠের সেই রিপোর্টটির মত বক্তব্যই হুবহু উঠে এসেছে গতকাল রবিবার উখিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের ইফতার মাহফিল উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায়। আওয়ামী লীগের ত্যাগী নেতারাই সাবেক এমপি আবদুর রহমান বদি’র কুকীর্তি নিয়ে সরব ছিলেন এ সভায়। নেতারাই বলেছেন তাদের বুকের চাপা বেদনার কথা। তারা প্রকাশ করেছেন ক্ষোভের কথা। সেই ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্টিত নির্বাচনে প্রথমবারের মত এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন আবদুর রহমান বদি। পরবর্তীতে ২০১৪ সালেও নির্বাচিত হন তিনি। এরপর গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর এমপি নির্বাচিত হন তাঁর সহধর্মীনি।
আলোচনা সভার সকল বক্তাই এক সুরে সুর মিলিয়ে বলেছেন-‘ মাফিয়া চক্র এতদিন ধরে জাতির জনকের হাতে গড়া সংগটন, দেশের স্বাধীনতার দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে কুঁড়ে কুঁড়ে খেয়েছে। এই দলের ছায়ায় থেকে অবৈধ ক্ষমতার মাধ্যমে এই চক্রটি হাতিয়ে নিয়েছে শত শত কোটি টাকা। দলের ছত্রছায়ায় থেকে ইয়াবা কারবারের টাকায় ক্ষমতা আঁকড়ে ধরেছেন। এসব তালিকাভুক্ত ইয়াবা ডনদের কবল থেকে বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগকে রক্ষা করার উপর বক্তারা তাগিদ দিয়েছেন।’
পালং গার্ডেনের সভায় উখিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অধ্যক্ষ মোহাম্মদ শাহ আলম সভাপতিত্ব করেন। দলের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরীর পরিচালনায় এক চমৎকার খোলামেলা পরিবেশে আলোচনা সভাটি অনুষ্টিত হয়। সভায় তৃণমূলের ত্যাগি নেতারা সবাই বক্তৃতা করেন-দলের হারানো দিনের ইয়াবা সিন্ডিকেটের নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি নিয়ে। একজন নেতা অত্যন্ত ভারাক্রান্ত মনে বলেছেন, সাবেক এমপি আবদুর রহমান বদি আওয়ামী লীগে লালিত হননি বিধায় আজ আমাদের এমন দুর্দিন। এমনকি বিদায় বেলায় সাবেক এমপি বদি উখিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগটিকে পর্যন্ত ভিন্ন হাতে তুলে দিয়ে গেছেন। এই ত্যাগি নেতা দুঃখের সাথে বলেন, তিনি আমাদের একজন এমপি দিয়ে গেছেন। এই এমপিকে জনগনতো দুরের কথা আমরাও চোখে দেখিনি। দল বাক্সবন্দি থাকার মত অবস্থায় তিনি দিয়ে গেছেন। কেউ একটি সুপারিশের জন্য গেলে এমপি বলেন, আগে সাবেক এমপি’র কাছে গিয়ে সুপারিশ নিয়ে আসুন। কথায় বলে-কাঙ্গালের কথা বাসি হলেও ফলে। অতএব সাধু সাবধান। #### ০২-০৬-২০১৯ খ্রীঃ
লেখক
তোফায়েল আহমদ,
সিনিয়র রিপোর্টার, দৈনিক কালের কন্ঠ, আর্ন্তজাতিক সংবাদ মাধ্যম বিবিসি ও এসোসিয়েটেড প্রেস-এপি’র ষ্ট্রিঙ্গার।