ডেস্ক রিপোর্ট::
বঙ্গোপসাগরের বুকে জেগে থাকা দ্বীপ সোনাদিয়ায় বিশ^মানের ইকোট্যুরিজম পার্ক গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা)। এটি হবে দেশের সর্ববৃহৎ ইকোট্যুরিজম পার্ক। এর জন্য মহাপরিকল্পনা (মাস্টারপ্ল্যান) প্রনয়নের কাজ চলছে। এতে দ্বীপের সৌন্দর্য্য বৃদ্ধির পাশাপাশি জীববৈচিত্র্য রক্ষার বিষয়টিও গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। ওই পরিকল্পনা অনুসারে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) অর্থায়নে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হবে। আগামী ডিসেম্বরেই প্রকল্পের কাজ শুরু হবে। সংশ্লিষ্ঠ একাধিক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সোনাদিয়া দ্বীপে ইকো পার্ক গড়ে তোলার মাস্টারপ্ল্যানের সামগ্রিক বিষয় নিয়ে মৎস্য মন্ত্রণালয়ের সমুদ্র মৎস্য অধিদপ্তর, পরিবেশ অধিদপ্তর, বন বিভাগ, সমুদ্রবিজ্ঞান বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরের অভিজ্ঞদের মতামত নেওয়া প্রয়োজন। সোনাদিয়ার সঙ্গে যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়ন করা হলে পর্যটন শিল্পের বিকাশের পাশাপাশি দেশের অর্থনীতিতে তা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে বলে মনে করছে সংশ্লিষ্টরা।
সূত্রে জানা গেছে, মহেশখালী উপজেলার কুতুবজোম ইউনিয়নে সোনাদিয়া দ্বীপে ১০ হাজার একর জমি রয়েছে। আর দৃষ্টিনন্দন প্যারাবন জমির পরিমাণ প্রায় দুই হাজার ২০০ একর। এ ছাড়া রয়েছে নৈসর্গিক সমুদ্রসৈকত, লাল কাঁকড়ার ঝাঁক, বিরল প্রজাতির পাখি।
পর্যটনের সম্ভাবনা থাকার পরও দীর্ঘদিন এই দ্বীপে সরকারি-বেসরকারি কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। বর্তমান সরকার দেশের বিভিন্ন এলাকার উন্নয়নের মতো সোনাদিয়া দ্বীপের প্রাকৃতিক ও অর্থনৈতিক সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর উদ্যোগ নেয়। এই দ্বীপের ১০ হাজার একর জমি ইকো পার্ক নির্মাণের জন্য দেওয়া হয়েছে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষকে। এর ফলে দেশের পর্যটন শিল্পের বিকাশ এবং অর্থনীতিতে ইতিবাচক অবদান রাখবে বলে মনে করেন বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী। তিনি জানান, মহেশখালী উপজেলার এই দ্বীপেই গড়ে তোলা হচ্ছে দেশের বৃহত্তম ইকোট্যুরিজম পার্ক। পরিকল্পিত ইকোট্যুরিজম পার্ক গড়ে তুলতে তৈরি করা হচ্ছে মাস্টারপ্ল্যান। মাহিন্দ্র ইঞ্জিনিয়ারিং নামে ভারতের একটি প্রতিষ্ঠান এই মাস্টারপ্লান তৈরির কাজ করছে।
একসময় সোনাদিয়ায় গভীর সমুদ্রবন্দর গড়ে তোলার চিন্তা করা হলেও বর্তমানে তা থেকে সরে এসে ইকোট্যুরিজমের মাধ্যমে দ্বীপটিকে অর্থনৈতিক জোন হিসেবে গড়ে তোলা হবে। পরিবেশ সংরক্ষণ আইন-১৯৯৫ অনুযায়ী এ দ্বীপের পরিবেশের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে এমন কর্মকান্ড নিষিদ্ধ। দ্বীপটিতে পর্যটন শিল্পের বিকাশ ঘটাতে দ্বীপবাসীর সম্পৃক্ততায় কমিউনিটিভিত্তিক ইকোটুরিজমের সুযোগ রয়েছে। তবে মাস্টারপ্ল্যানে দীর্ঘ মেয়াদের পর্যটন পরিকল্পনায় সোনাদিয়াকে কিভাবে সাজানো হচ্ছে তার জন্য অপেক্ষায় থাকতে হবে বলে জানান বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান।
সূত্র জানায়, সোনাদিয়া দ্বীপে ৩৩৪টি পরিবারের বসতি রয়েছে। এরা মূলত মৎস্য আহরণ করে জীবিকা নির্বাহ করে। কিছু পরিবার চিংড়ি ও লবণ উৎপাদন পেশায় জড়িত। শীত মৌসুমে সাগর থেকে আহরিত মাছ শুকানো ও গুদামজাত করার কাজও হয় এখানে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমুদ্রবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক সাইদুর রহমান বলেন, ‘আগে থেকে ঠিক করতে হবে সোনাদিয়া দ্বীপে প্রতিদিন কত মানুষ ভিজিট করতে পারবে। সোনাদিয়ার যে এরিয়া তাতে প্রতিদিন দুই থেকে সর্বোচ্চ তিন শ মানুষ ঘুরতে যেতে পারবে। এর বেশি হলে দ্বীপের সৌন্দর্য নষ্ট হবে।’
বেজার নির্বাহী সদস্য (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) হারুন উর রশীদ বলেন, ‘মাহিন্দ্র ইঞ্জিনিয়ারিং দুই মাস আগে সোনাদিয়া ইকোট্যুরিজম পার্ক তৈরির মাস্টারপ্ল্যানের প্রাথমিক একটা রিপোর্ট জমা দিয়েছে। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে চূড়ান্ত রিপোর্ট জমা দিলে তার আলোকে আমরা কাজ করব। দ্বীপটিতে বর্তমানে যে জীববৈচিত্র্য রয়েছে এই প্রকল্পের মাধ্যমে তা আরো বৃদ্ধি করা হবে।’ সুত্র: দৈ: কক্সবাজার