খড়গ ঝুলছিল বেশ কিছুদিন ধরেই। নানা টানাপোড়েনের পর অবশেষে তা নেমেই এলো। অল ইন্ডিয়া ফুটবল ফেডারেশনকে (এআইএফএফ) অনির্দিষ্ট কালের জন্য নিষিদ্ধ করল ফিফা।
বিশ্ব ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি সোমবার বিবৃতিতে জানায়, ফেডারেশনে ‘তৃতীয় পক্ষের অন্যায্য হস্তক্ষেপের’ কারণে নিষেধাজ্ঞার এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা।
নিষেধাজ্ঞার কারণে ফিফার কোনো ধরনের টুর্নামেন্টে খেলা ও ফুটবল কার্যক্রমে অংশ নিতে পারবে না ভারত। আগামী ১১ থেকে ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত ভারতে অনুষ্ঠেয় মেয়েদের অনূর্ধ্ব-১৭ ফুটবল বিশ্বকাপও চরম অনিশ্চয়তায় পড়ে গেল। এই আসর নিয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ চিন্তা-ভাবনা করে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছে ফিফা।
প্রফুল প্যাটেলের নেতৃত্বাধীন কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর এআইএফএফের সবশেষ নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল ২০২০ সালের ডিসেম্বরে। কিন্তু গঠনতন্ত্র সংশোধন সংক্রান্ত একটি জটিলতায় অচলবস্থার তৈরি হয়। সেই সংশোধনী মূলত প্যাটেলেরই চাওয়া ছিল বলে সংবাদমাধ্যমে খবর আসে নানা সময়ে। নির্বাচন না হওয়ায় প্যাটেলই দায়িত্বে রয়ে যান।
গত মে মাসে ভারতের সর্বোচ্চ আদালত এআইএফএফের সেই কমিটি ভেঙে দিয়ে তিন সদস্যের একটি কমিটি গড়ে দেন। ফেডারেশন পরিচালনা, গঠনতন্ত্র সংশোধন ও দেড় বছর ধরে ঝুলে থাকা নির্বাচন আয়োজনের দায়িত্ব দেওয়া হয় ওই কমিটিকে।
এরপর এশিয়ান ফুটবল কনফেডারেশনের (এএফসি) সাধারণ সম্পাদক উইন্ডসর জনের নেতৃত্বে একটি দলকে ভারতে পাঠায় ফিফা ও এএফসি। তারা ভারতের ফুটবল কর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করে একটি রোডম্যাপ তৈরি করে দেয়, যে অনুযায়ী জুলাইয়ের মধ্যে গঠনতন্ত্র সংশোধন করে ১৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে নির্বাচন করতে বলা হয়।
রোডম্যাপ অনুযায়ী, অগাস্টের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে বিশেষ সাধারণ সভা ডেকে গঠনতন্ত্রে সংশোধনী অনুমোদনের কথা এআইএফএফের। তবে এই মাসের শুরুতে ভারতের সুপ্রীম কোর্ট আদেশ দেন দ্রুত নির্বাচন সেরে ফেলতে এবং নির্বাচিত কমিটি ভারপ্রাপ্ত দায়িত্ব নেবে তিন মাসের জন্য।
আদালতের এই আদেশে থমকে যায় ফিফা ও এএফসির করে দেওয়া রোডম্যাপ। ফিফা এরপরই চিঠি দিয়ে এআইএফএফকে সতর্ক করে দেয় এবং আদালতের রায়ের অনুলিপি ফিফাতে পাঠাতে নির্দেশ দেয়। গত মঙ্গলবার ছিল অনুলিপি পাঠানোর শেষ সময়। এরপর এলো নিষেধাজ্ঞার এই সিদ্ধান্ত।
ফিফা বিবৃতিতে জানায়, ‘নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হবে তখনই, যখন এআইএফএফের নির্বাহী কমিটির ক্ষমতা নাকচ করে একটি প্রশাসক কমিটি গঠনের নির্দেশ দেওয়া হবে এবং এআইএফএফের প্রশাসকেরা ফেডারেশনের দৈনন্দিন কাজে পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ ফিরে পাবেন।’
ভারতের যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সার্বক্ষনিক যোগাযোগ রাখা হবে বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করে ফিফা এবং ইতিবাচক ফলাফলের ব্যাপারেও তারা আশাবাদী বলে জানানো হয়।
কোনো দেশের ফুটবল ফেডারেশনে সরকারী বা বাইরের কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ ফিফা কখনোই মেনে নেওয়া, আইনীভাবেও স্বচ্ছতা বজায় রাখতে বলা হয়। বিভিন্ন দেশকেই এই কারণে নানা মেয়াদে নিষিদ্ধ হতে হয়েছে ফুটবলে। সাম্প্রতিক সময়ে সরকারী হস্তক্ষেপের কারণে কুয়েত, ইন্দোনেশিয়া নিষিদ্ধ হয়েছিল। একই কারণে ২০০২ সালে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল বাংলাদেশকেও।