আরবি বছরের শেষ মাসের নাম জিলহজ। যে মাসে মুসলিম উম্মাহ পবিত্র হজ পালন করে থাকেন। এ মাসের ফজিলত সম্পর্কে পবিত্র কোরআন ও হাদিসে সুস্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে। আর তাহলো-
> সূরা ফাজরে প্রথম দুই আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘শপথ ভোরবেলার! শপথ ১০ রাতের!’
তাফসিরে ইবনে কাসিরে ১০ রাতের শপথ সম্পর্কে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ১০ রাতের শপথ দ্বারা জিলহজ মাসের প্রথম ১০ দিনই উদ্দেশ্য।
> সূরা হজের ২৮ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তারা যেন নির্দিষ্ট দিনসমূহে আল্লাহর স্মরণ করে।’
এ আয়াতে নির্দিষ্ট দিনসমূহের আল্লাহর স্মরণের উদ্দেশ্য সম্পর্কে বিখ্যাত মুফাসসির ও সাহাবি হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেছেন, ‘(এ নির্দিষ্ট দিনসমূহ দ্বারা উদ্দেশ্য) জিলহজ মাসের প্রথম দশ দিন।’
> জিলহজ মাসের প্রথম ১০ দিনের আমলের ফজিলত জিহাদের চেয়েও মর্যাদাবান। হাদিসে এসেছে-
হজরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, এ দিনগুলোর (জিলহজের প্রথম ১০ দিনের) আমলের তুলনায় কোনো আমল-ই অন্য কোনো সময় উত্তম নয় । তারা বলল : জিহাদও না ? তিনি বললেন : জিহাদও না, তবে যে ব্যক্তি নিজের জানের শঙ্কা ও সম্পদ নিয়ে বের হয়েছে, অতঃপর কিছু নিয়েই ফিরে আসেনি।’ (বুখারি)।
> আল্লাহর কাছে সর্বাধিক প্রিয় জিলহজের প্রথম ১০ দিনের আমল। হাদিসে এসেছে-
হজরত ইবনে ওমর রাদিআল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহর কাছে কোনো দিনই প্রিয় নয়, আর না তাতে আমল করা, এ দশ দিনের তুলনায়। সুতরাং তোমরা তাতে (জিলহজের প্রথম ১০ দিন) বেশি বেশি তাহলিল, তাকবির ও তাহমিদ পাঠ কর।’ (তাবারানি)।
পবিত্র কোরআন ও হাদিসের আলোকে ওলামায়েকেরামও জিলহজ মাসের প্রথম ১০ দিনের ইবাদতে একনিষ্ঠভাবে নিজেদের নিয়োজিত করতেন। যার প্রমাণ দিয়ে গেছেন যুগশ্রেষ্ঠ ওলামায়েকেরাম।
> হজরত সাঈদ ইবনে জুবায়ের রাহিমাতুল্লাহি আলাইহি জিলহজের প্রথম ১০ দিনের ইবাদতে নিজেকে একনিষ্ঠভাবে নিয়োজিত রাখতেন। যেভাবে প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিলহজ মাসে ইবাদত-বন্দেগি করতেন।
হজরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনায় এসেছে, ‘যখন জিলহজ মাসের ১০ দিন প্রবেশ করত, তখন তিনি খুব মুজাহাদা করতেন, যেন তার ওপর তিনি শক্তি হারিয়ে ফেলবেন।’ (দারেমি)।
> হজরত ইবনে হাজার আসকালানি রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেছেন, ‘জিলহজ মাসের ১০ দিনের ফজিলতের ক্ষেত্রে যা স্পষ্ট তা হচ্ছে- এখানে মূল ইবাদাতগুলোর সমন্বয় ঘটেছে। অর্থাৎ নামাজ, রোজা, সাদকা ও হজ। যা অন্যান্য সময় যথাযথভাবে আদায় করা হয় না।’ (ফতহুল বারি)।
পবিত্র রমজান মাসের শেষ ১০ রাত যেমন মর্যাদার ঠিক মুমিন মুসলমানের জন্য জিলহজের প্রথম ১০ দিন ও রাতের ইবাদত-বন্দেগিও অনেক মর্যাদা ও সম্মানের।
মুসলিম উম্মাহর উচিত, জিলহজ মাসের প্রথম ১০ দিন রোজা পালনের মাধ্যমে অধিক সাওয়াব ও ফজিলত লাভের করা। বিগত জীবনের গোনাহ থেকে নিজেদের মুক্ত করা। আল্লাহর নৈকট্য ও ভয় অর্জন করা।
উল্লেখ্য যে, ০২ আগস্ট সন্ধ্যায় চাঁদ দেখা সাপেক্ষে শুরু হতে পারে জিলহজ মাস। যদি ০২ আগস্ট চাঁদ না উঠে তবে ০৩ আগস্ট সন্ধ্যা থেকে নিশ্চিত শুরু হবে জিলহজ মাস। আর সেদিন থেকে কোরবানির আগ পর্যন্ত ইবাদত-বন্দেগি ও রোজা পালনই হবে মুমিন মুসলমানের জন্য সর্বোত্তম কাজ।
মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তায়ালা মুসলিম উম্মাহকে হজের মাস জিলহজের প্রথম ১০ দিন রোজা পালন এবং রাত জেগে ইবাদত করার তাওফিক দান করুন। আল্লাহুম্মা আমিন।
পাঠকের মতামত