ওবাইদুল হক,সম্পাদক,উখিয়া নিউজ ডটকম, ইনানী সী-বীচে থেকে ফিরে::
পবিত্র ঈদুল ফিতরের দীর্ঘ ছুটিতে উখিয়ার পর্যটন নগরী ইনানীর সী-বীচে দেশী বিদেশী পর্যটকদের ভীড় বেড়েছে। বিশ্বের দীর্ঘতম সমূদ্র সৈকতের লীলাভূমি ইনানী সী-বীচ যেন পর্যটকদের ভ্রমনে অভিন্ন আনন্দ এনে দেয়। ইনানী বিচে বিস্তৃর্ন এলাকা জুড়ে প্রকৃতি নিজ খেয়ালে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রেখেছে অসংখ্য কোরাল। এসব কোরালের রহস্যময়ী অবস্থান অবলোকন করতে এই বীচে কিছুটা সময় কাটাতে দেশ-বিদেশ থেকে হাজারো পর্যটক চলে আসে। ইনানী বিচের অদুরেই রয়েছে আরো মন মাতানো প্রশান্তির পাটুয়ারটেক সী-বীচ। পাটুয়ারটেক সী-বিচের একটু পূর্বে পাহাড়ের নিচে রহস্যময়ী কানা রাজার গুহা। কানা রাজার গুহার পাশেই জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতি বিজড়িত ঐতিহাসিক ফইল্লা চাকমার মাচাং ঘর দেখতে আনন্দ লাগে। পশ্চিমে বিস্তৃর্ণ নন্দনীয় সমুদ্রের ঢেউ পূর্বে উচু পাহাড় তার মাঝেই ইনানী সী-বীচ।
পৃথিবীর দীর্ঘতম বেলাভূমি কক্সবাজার থেকে টেকনাফ বীচের উখিয়ার ইনানী সী-বিচ দেখতে ও সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে সাধারণ দর্শনার্থীদের চেয়ে রাজধানী সহ দূরদুরান্ত থেকে আসা ভিআইপি ট্যুরিষ্টদের পদচারনায় মূখরিত হয়ে উঠেছে। এক সময় ইনানী সী-বীচের বীচের জলরাশি ও ঢেউয়ের নৃত্য, প্রকৃতির দৃশ্য উপভোগ করে সময় কাটাতেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। স্বাধীনতার পর থেকেই এই বীচের গুরুত্ব এবং আকর্ষন বেড়েই চলছে। সাধারন পর্যটকরা কক্সবাজার শহর সংলগ্ন বীচ ভ্রমন করে তাদের নিজ আবাস স্থলে ফিরে নিজেকে গর্বিত মনে করে বলে একাধিক পর্যটকরা উৎফুল্ল মনে জানিয়েছেন।
সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, দেশী-বিদেশী পর্যটকরা কক্সবাজার ও সেন্টমার্টিনের চেয়ে ইনানী বিচে অবকাশ যাপন ও দর্শনে অধিকতর সময় ব্যয় করতে চাইলেও পর্যাপ্ত পরিমাণ নিরাপত্তা ও আবাসিক হোটেল-মোটেল না থাকায় তাদেরকে কক্সবাজারে ফিরে যেতে হয় বলে জানালেন ঢাকা থেকে আসা পর্যটক দম্পতি শাহেদুল ও সায়মা ইয়াছমিন। তারা বলেন, ইনানী বীচে কক্সবাজার বীচের চেয়ে স্বচ্ছ নীলাব পানি, অসংখ্য কোরালের ছড়াছড়ি, সূর্যাস্তের অপরূপ দৃশ্য ও সমুদ্র ঘেষা পাহাড়। যার কারণে পর্যটকরা বেশি আনন্দ উপভোগ করতে পারে।
জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে আসা একাধিক পর্যটক ইনানী সী-বীচ ঘুরে খুশি মনে এ উখিয়া নি্উজ ডটকম বলেন, পবিত্র ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে আমরা এখানে বেড়াতে এসেছি। ইনানী সী-বীচ তথা কক্সবাজারের মনোরম পরিবেশ দেখে খুব ভালই লেগেছে। আমরা আগে শুনেছিলাম ইনানী সী-বীচে সূর্যাস্তের কথা কিন্তু বাস্তবে দেখে নিজেকে গর্বিত মনে হচ্ছে। তারা বলেন, সমুদ্রের পানিতে নেমে গোসল, প্রবাল পাথরে বসে ছবি করছি। তবে কক্সবাজার শহরের অস্বস্তিকর পরিবেশ, সেন্টর্মাটিনে স্বল্প সময় অবস্থানের পর দিনে গিয়ে দিনে ফেরা কষ্টসাধ্য, বিরক্তিকর, ব্যয়বহুল ও পরিশ্রান্ত হয়ে পড়া প্রভৃতির কারনে পর্যটকরা ইনানী বীচকে বেশী গুরুত্ব দিয়ে থাকে। ইনানী বিচের পূর্নাঙ্গ রূপ দেখতে পর্যটকদের কিছু সময় হাতে নিয়ে আসতে হলেও ভাটার সময় এই বিচের পানি যেমন নীলাব দেখায়, তেমনি ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কোরাল পাথুরের উপর ছোটাছুটি স্মৃতির মানসপটে ফটোসেশন করা, সূর্যাস্ত দর্শন আরও কত কিচ্ছু মনকে আন্দোলিত করে তোলে। আবার জোয়ারের সময় থেকে কিছুক্ষন অবস্থান কালে জোয়ারের স্বচ্ছ পানিতে ঢেউয়ের আঁছড়ে ক্রমেই ছড়িছিটিয়ে থাকা অসংখ্য কোরালের অদৃশ্য হয়ে যাওয়া, ইনানীর বড় ও ছোট খালে জোয়ারের পানিতে টুইটুম্বর হওয়া, খালে মাছ ধরার নৌকা ও ফিশিং বোটের নড়াচড়া, ইনানীর পাশেই সবুজ-শ্যামল গ্রামের চিরাচরিত চিত্র, পাহাড়ের সবুজ গাছ-গাছালি, বীচের লাল কাঁকড়াদের হুড়োহুড়ি, সাগরে জেলেদের মাছ শিকারের দৃশ্য দেখতে ভাল লাগে। ইনানীতে তারকা মানের আবাসিক হোটেল, বনবিভাগের রেষ্ট হাউস, ব্যক্তিমালিকানাধীন কয়েকটি কটেজ আছে তবে তা পূর্ব থেকে বুকিং করে না আসলে হয়ত ইনানীতে রাত যাপনের ইচ্ছা অপূর্ণই থেকে যায়।
ইনানী সী-বিচে দেশের যেকোন এলাকা থেকে যাতায়াতের সু-ব্যবস্থা আছে। ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের যেকোন অঞ্চল থেকে কক্সবাজারের সরাসরি বিলাস বহুল গ্রীন লাইন, সৌদিয়া-এস আলম লাক্সারী, সোহাগ, শ্যামলী, সেন্টমাটিন সার্ভিস সহ বেশ কিছু পরিবহন সার্ভিসে কক্সবাজার আসা যায়। মেরিন ড্রাইভ রোড ছাড়াও কক্সবাজার শহরে প্রবেশের পূর্বে লিংরোড হয়ে কক্সবাজার-টেকনাফ সড়কের উখিয়ার কোট বাজার রাস্তা হয়ে ইনানী যাতায়াত করা যায়। উভয় রোড দিয়ে ইনানী পৌঁছতে প্রায় ঘন্টা খানেক সময় লাগে। প্রাইভেট গাড়ী হলে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের এ স্থান দিয়ে ইনানী যাতায়াত সহজ ও সুবিধা হয়। আবার মেরিন ড্র্রাইভ রোড় দিয়ে ইনানী যাতায়াতকারীদের বেশি ভাল লাগতে পারে, কেননা একদিকে বিশাল সাগরের জলরাশি, বেলাভূমি অপরদিকে পাহাড়ের পাদদেশ দিয়ে ছোট ছোট শ্যামল গ্রামের বিচিত্র দৃশ্য। সারাদিন ভ্রমন করে রাত যাপন করতে না চাইলেও তেমন বিড়ম্বনা নেই, রাত যতই হউক না কেন কক্সবাজার শহরে ফেরা অতি সহজ। কক্সবাজার শহরে যেকোন মানের ও দামের আবাসিক হোটেল-মোটেল, রেষ্টহাউসে থাকার সু-ব্যবস্থা রয়েছে। ইনানী বিচে স্থানীয় লোকদের পাশাপাশি টুরিষ্ট পুলিশের সার্বক্ষনিক নিরাপত্তা ও সহযোগীতার কারণে ভ্রমন পিপাসু পর্যটকরা নির্ভয়ে ভ্রমন করতে পেরে তাদের ভ্রমন স্মৃতিময় হয়ে উঠে।উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাঈন উদ্দিন জানান, ইনানী বীচ পর্যটন বরণে প্রস্তুত রয়েছে। এজন্য পর্যটকদের সার্বিক নিরাপত্তায় টুরিস্ট পুলিশের পাশাপাশি ইনানী পুলিশ ফাঁড়ির সদস্যরা কাজ করছেন।