ওবাইদুল হক চৌধুরী,সম্পাদক ,উখিয়া নিউজ ডটকম::
আজ ১০ জিলহজ মঙ্গলবার পবিত্র ঈদুল আজহা। মুসলিম মিল্লাতের পিতা হজরত ইব্রাহিম (আ:)-এর ত্যাগের স্মৃতিবিজড়িত এই ঈদ। সকালে ঈদের নামাজ শেষে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে পশু কোরবানি করবেন সামর্থ্যবান মুসলমানরা। মূলত আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য প্রয়োজনে নিজের প্রিয় বস্তুকে কোরবানি দেয়াই এই ঈদের শিক্ষা।
ঈদুল আজহা হজরত ইব্রাহিম (আ:) ও তাঁর পুত্র হজরত ইসমাইল (আ:)-এর সাথে সম্পর্কিত। হজরত ইব্রাহিম (আ:) স্বপ্নে আদিষ্ট হয়ে পুত্র ইসমাইলকে আল্লাহর উদ্দেশ্যে কোরবানি করতে গিয়েছিলেন। আসলে আল্লাহর পক্ষ থেকে এই আদেশ ছিল হজরত ইব্রাহিমের জন্য পরীক্ষা।
তিনি পুত্রকে আল্লাহর নির্দেশে জবাই করার সব প্রস্তুতি নিয়ে সেই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছিলেন। ফলে সাথে সাথে পুত্র ইসমাইলের পরিবর্তে পশু কোরবানি করার নির্দেশ আসে আল্লাহর পক্ষ থেকে। সেই ঐতিহাসিক ঘটনার স্মৃতি ধারণ করেই হজরত ইব্রাহিম (আ:)-এর সুন্নত হিসেবে পশু জবাইয়ের মধ্য দিয়ে কোরবানির বিধান এসেছে ইসলামি শরিয়তে। শরিয়তে সামর্থ্যবানদের জন্য পশু কোরবানি করা ওয়াজিব। আল্লাহর উদ্দেশ্যে কোরবানি করার পর আনন্দ থেকেই পালিত হয় ঈদুল আজহা বা কোরবানির ঈদ। জিলহজ মাসের ১০ তারিখে এ ঈদ উদযাপিত হয়।
ইসলামে কোরবানি খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। পবিত্র কুরআনে সূরা কাউসারে এ ব্যাপারে বলা হয়েছে- ‘অতএব আপনার পালনকর্তার উদ্দেশ্যে নামাজ পড়ুন এবং কোরবানি করুন’।
সূরা হজে বলা হয়েছে ‘কোরবানি করা পশু মানুষের জন্য কল্যাণের নির্দেশনা’।
কোরবানির মূল উদ্দেশ্যই তাকওয়া বা খোদাভীতি।
এ প্রসঙ্গে কুরআনে বলা হয়েছে- ‘এগুলোর গোশত আমার কাছে পৌঁছায় না। কিন্তু তোমাদের তাকওয়া পৌঁছে যায়।’
রাসূল (সা:) বলেছেন, ‘ঈদুল আজহার দিন কোরবানির চেয়ে আর কোনো কাজ আল্লাহর কাছে অধিক পছন্দীয় নয়।’ অন্যত্র বলেছেন- ‘যে ব্যক্তি সামর্থ্য থাকার পারও কোরবানি দিলো না সে যেন আমার ঈদগাহে না যায়।’
বিভিন্ন বর্ণনা থেকে জানা যায়, পৃথিবীতে মানবজাতির সূচনা থেকেই কোরবানির প্রচলন। হজরত আদম (আ:)- এর দুই পুত্র হাবিল ও কাবিল সর্বপ্রথম কোরবানি দিয়েছিলেন।
এ প্রসঙ্গে কুরআনে এসেছে- ‘আপনি তাদেরকে আদমের দুই পুত্রের বাস্তব অবস্থা পাঠ করে শুনান। যখন তারা উভয়ে কিছু কোরবানি করেছিল। তখন তাদের একজনের কোরবানি গৃহীত হয়েছিল এবং অন্যজনেরটি গৃহীত হয়নি’ (সূরা মায়েদা-২৭)।
তবে ইসলামে যে কোরবানির বিধান তা হজরত ইব্রাহিম (আ:)-এর সাথে সম্পর্কিত। আজ থেকে প্রায় পাঁচ হাজার বছর আগের ঘটনা। ৮৫ বছর বয়সে আল্লাহ তাকে সন্তান দান করলেন। আবার আল্লাহর পক্ষ থেকে সে সন্তানকেই কোরবানি করার নির্দেশ এলো স্বপ্নযোগে। পরীক্ষায় বাপ-বেটা দু’জনেই উত্তীর্ণ হলেন। একজন নিজ পুত্রকে কোরবানি করার জন্য, আরেকজন নিজে কোরবানি হওয়ার জন্য মাথা নুয়ে দিয়ে আল্লাহর নির্দেশ পালনের চরম পরাকাষ্ঠা প্রদর্শন করলেন।
আল্লাহর সন্তুষ্টিই কোরবানির মূল উদ্দেশ্য। তাঁর পথে প্রয়োজনে জীবন ও সবচেয়ে প্রিয় বস্তু উৎসর্গের জন্য তৈরি হওয়ার শিক্ষাই এর মধ্যে নিহিত। এ জন্যই পশু জবাইয়ের সময় বলা হয়- ‘ইন্নাস সালাতি ওয়া নুসুকি ওয়া মাহইয়াইয়া ওয়া মামাতি লিল্লাহি রাব্বিল আলামীন।’ অর্থাৎ নিশ্চয় আমার নামাজ, আমার কোরবানি আমার জীবন, আমার মৃত্যু সবই আল্লাহর জন্য, যিনি নিখিল বিশ্বের প্রতিপালক।’
জাতীয় কবির ভাষায় : মনের পশুরে কর জবাই, পশুরাও বাঁচে, বাঁচে সবাই..’।
হাদিসের বর্ণনা অনুযায়ী, প্রতি বছর জিলহজ মাসের ১০ তারিখে বিশ্ব মুসলিম ময়দানে নামাজ আদায়ের পর যার যা সাধ্য ও পছন্দ সেই অনুযায়ী পশু কুরবানি দিয়ে থাকেন। আরবি ‘আজহা ’এবং ‘কুরবান’ উভয় শব্দের অর্থ হচ্ছে উৎসর্গ। কুরবানি শব্দের উৎপত্তিগত অর্থ হচ্ছে আত্মত্যাগ, আত্মোৎসর্গ, নিজেকে বিসর্জন, নৈকট্য লাভের চেষ্টা ও অতিশয় নিকটবর্তী হওয়া ইত্যাদি।
জিলহজ মাসের ১০, ১১ ও ১২ তারিখের যে কোনো একদিন কুরবানি করা যায়। গরু, মহিষ, উট, ছাগল, ভেড়া, দুম্বা এ শ্রেণির প্রাণি কুরবানি করা যায়।