২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের জাতিগত দাঙ্গার শিকার হয়ে প্রায় ১১ লক্ষ রোহিঙ্গা বাংলাদেশের সর্বদক্ষিনের জেলা পর্যটন নগরী কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলায় অস্থায়ী শিবিরে অবস্থান করছেন।জীবন রক্ষাকারী সকল ধরনের সুবিধা সরকারি বেসরকারি যৌথব্যবস্থাপনা প্রদান করা হচ্ছে।বিগত ২৫ আগস্ট -২০১৯ তারিখে রোহিঙ্গারা বড়সড় একজমায়েত করে তাদের বাস্তুস্থুতির ২য় বর্ষফূর্তি পালন করে এবং তা বিশ্ব মিডিয়ার নজরে আসে।এরপর থেকে বাংলাদেশ সরকারের অনেক মহল থেকে তাদের মোবাইল নেটওয়ার্ক ব্যবহারের ব্যপারে সমালোচনা করা হয়।ফলস্বরূপ সেপ্টেম্বর -২০১৯ এর ১ম সপ্তাহ থেকে রোহিঙ্গাও তদসংলগ্ন এলাকায় গতিসম্পন্ন থ্রি/ফোরজি নেটওয়ার্ক সেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়।গতিসম্পন্ন নেটওয়ার্কবন্ধে কার কি লাভ হল তা আমার বুঝে না আসলেও স্থানীয় জনগোষ্ঠীর কি ভোগান্তি হচ্ছে তা নিয়ে আমার আজকের ভাবনা।প্রথমতঃরোহিঙ্গা আগমনের ফলে উখিয়া-টেকনাফ উপজেলার মানুষ স্থায়ীভাবে যে ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন তা কখনো পূরণ হবার নয় যেমনঃশিক্ষাব্যবস্থা,যোগাযোগ,পরিবেশ-প্রতিবেশ,আইন শৃঙ্খলা, পণ্যদ্রব্যের উর্ধ্বগতি,স্বাস্থ্যঝুঁকি ইত্যাদি।তার পাশাপাশি যুক্ত হয়েছে মোবাইল যোগাযোগে গতিহীনতা।গতিশীল নেটওয়ার্ক বন্ধের পর থেকে মোবাইলসেবায় বেশ নেতিবাচক পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে যেমন উখিয়া স্টেশনের পর থেকে টেকনাফ পৌরসভা পর্যন্ত অনেক জায়গায় কোন ধরণের মোবাইল নেটওয়ার্ক না থাকা,একাটা ২/৩ মিনিটের বেশি সময় ধরে নিরবিচ্ছিন্ন নেটওয়ার্ক না থাকা,ক্ষনেক্ষনে কল ড্রপ ইত্যাদি।এতে করে এক শ্রেনির সুবিধাবাদীরা ওয়াইফাই সংযোগ প্রদান করে মোটা অংকের টাকা আদায় করছেন।যদিও ওয়াই-ফাই সংযোগ কেবল সচ্ছলরাই নিচ্ছেন।মোবাইল সেবা বন্ধের পিছনে কর্তৃপক্ষ কিংবা সরকারের দাবী রোহিঙ্গাদের আরাম কমানো কিন্তু বিগত ৪ মাসে মনে হল রোহিঙ্গারা এতে মোটেও বিচলিত নয় বরং তারা এরইমধ্যে আগের তুলনায় ভালো গতিসম্পন্ন নেওয়ার্ক ব্যবহার করার পথ বের করেছে।কথিত আছে তাদের অধিকাংশই মায়ানমারের মোবাইল সংযোগ ব্যবহার করছেন বাংলাদেশ ভূখন্ডে বসে। এই সুযোগে মায়ানমারের মোবাইল অপারেটররা তাদের নেটওয়ার্ক বিস্তৃতি বেশ সম্প্রসারণ করছেন ফলে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সহজে তাদের নেটওয়ার্ক ব্যবহার করা যাচ্ছে। একদিকে চোরাই পথে মায়ানমারের সিমকার্ড বাংলাদেশে অবৈধভাবে প্রবেশ করছে অন্যদিকে বাংলাদেশ থেকে মোবাইল রিচার্জের নামে ঐ দেশে বেশ টাকা চলে যাচ্ছে।গতিসম্পন্ন নেটওয়ার্কবন্ধের ফলে অত্র এলাকার মানুষ তথ্যপ্রযুক্তিসেবা থেকে অনেক বছর পিছিয়ে পড়বে তাতে কোন সন্দেহ নেই।ডিজিটাল বাংলাদেশের সেবা থেকেও কিন্তু এই এলাকার মানুষ বঞ্চিত হচ্ছেন।রোহিঙ্গাদের কারণে স্থানীয়দের গতিসম্পন্ন মোবাইলসেবা থেকে বঞ্চিত করা মানে হল আমার ঘরে ডাকাত পড়েছে তাই আমার ঘর ডাকাতসহ পুড়িয়ে দেওয়া কিংবা মাথা ব্যাথার জন্য পুরো মাথা কেটেফেলা।সত্যিকার অর্থে রোহিঙ্গাদের সিমকার্ড প্রদান/বিক্রি বন্ধের জন্য কার্যকর ও বাস্তবসম্মত উদ্যোগ নেওয়া দরকার।প্রয়োজনে স্থানীয়দের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা নিয়ে বিনামূল্যে তাদের নামীয় সংযোগ পূনঃনিবন্ধন কিংবা নিবন্ধন যাচাই করা যেতে পারে।অথবা রোহিঙ্গা ক্যাম্প অধ্যুষিত এলাকার স্থানীয়দের জন্য বিশেষ ক্ষমতাসম্পন্ন সিমকার্ড চালু করা যেতে পারে যা দূর্বল সিংনেলেও গতিসম্পন্ন নেটওয়ার্কসেবার আওতায় থাকবে।যেহেতু মানবিক কারণেই রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়া হয়েছে সেহেতু এই একটা বিষয়ে বেশি কড়াকড়ি না করেও পারা যায় কিনা তাও ভেবে দেখা যেতে পারে।পরিশেষে মনে রাখতে হবে একটা নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠীর কারণে গোটা এলাকার জনগণকে অন্ধকারে নিক্ষেপ করা কখনোই সমীচীন হবেনা।দিনশেষে রোহিঙ্গারা তাদের দেশে ফিরে যাবে কিন্তু আমরা কি পারব আমাদের হারানো সেই অতীতকে ফিরে পেতে?আমাদের প্রত্যাশা ২০২০ সালের শুরুতে কর্তৃপক্ষ ক্ষতিগ্রস্ত স্থানীয় জনগোষ্ঠীর সেই হারানো গতিসম্পন্ন নেটওয়ার্ক ফিরিয়ে দিয়ে তাদের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখবেন।
লেখকঃ
জিয়াউর রহমান মুকুল,
উন্নয়ন ও মানবিক কর্মী,
শেড,কক্সবাজার।