ড.মনওয়ার সাগর::
লায়ন মোঃ মুজিবুর রহমান একজন স্বপ্নবাজ মানুষ,একটি জ্বলন্ত কবিতা।তাঁর সহধর্মিনী একজন সৃজনশিল্পী ও সাহসি যোদ্ধা! সৃষ্টির স্পন্দিত আবেগ নিয়ে এ দুজন মানুষ ছুটে বেড়িয়েছেন জীবনের শ্যামল প্রান্তরে।শিল্প সাহিত্য, সংস্কৃতি ও সমাজসেবার বিস্তৃত উপত্যকায়। তাঁদের অবিশ্রান্ত পথচলা যেন শেষ হবার নয়,হয়তো ভালোবাসার উজ্জ্বল আলোকধারায় আজীবন স্নাত হতে চান বলেই আজও ছুটে চলেছেন।মানসিক ঐশ্ব্রর্যে স্বচ্ছল এ দুজন মানুষের হাতেই গড়ে উঠেছে কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি,লরেল কালচারাল একাডেমীসহ বেশ কয়টি সৃজনশীল প্রতিষ্ঠান।লায়ন মোঃমুজিবুর রহমানকে নিয়ে লিখতে গিয়ে অস্কার ওয়াইল্ড এর একটি কথা মনে পড়লো।অস্কার ওয়াইল্ড-বলেছিলেন ‘আমরা সবাই পড়ে আছি নর্দমায়, তবু আমাদেরই মধ্যে কারো কারো চোখ নক্ষত্রের দিকে! লায়ন মোঃ মুজিবুর রহমান ভাইও হচ্ছেন তেমন একজন আলোকিত মানুষ,যার চোখ তাকিয়ে থাকে নক্ষত্রের দিকে।কণ্টকমুকুট মাথায় নিয়েও যিনি কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি প্রতিষ্ঠা করেছেন,লরেল কালচারাল একাডেমী প্রতিষ্ঠা করেছেন,আলোকিত মানুষ গড়ার জন্য নিরন্তর সাধনা করে যাচ্ছেন।যখন থেকে তাঁকে জানি তখন থেকেই আমি আজও সেই নির্নিমেষ নক্ষত্রের দিকে তাকিয়ে আছি।কথাটা এজন্য বললামযে, কক্সবাজারে ইয়াবা সম্রাটসহ এতো সম্রাট থাকতে,এতো এতো কোটিপতি বিত্তবান মানুষ থাকতেও শিক্ষানুরাগী এ মানুষটিই কক্সবাজারে প্রতিষ্ঠা করেছেন কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, এ এক অন্য রকম আলোর মিছিল।তিনি হচ্ছেন এ অঞ্চলের প্রমিথিউস।আমি তাঁকে খুব কাছ থেকে দেখেছি,জেনেছি, আত্মস্থ করেছি,নীরবে অধ্যয়ন করেছি।দেখেছি তাঁর স্বপ্ন,সাধনা, মনের ভেতর স্যাতস্যাতে আবহাওয়া আর গুমোট কান্না। মন খারাপের বিষয়টা যখন গলার কাছে পাক খেতে থাকে তখনও তিনি সাহস রাখতেন।নেপথ্য থেকে সাহস যোগাতেন তাঁর ঘরের সুনিপুণা শিল্পী মাহবুবা শিউলী।শত প্রতিবন্ধকতাতেও বিশ্ববিদ্যালয় পরিচলনাকে দুর্বোধ্য বলে সরিয়ে রাখার পক্ষপাতি ছিলেন না।তাঁর সাধ্য ও সাধনাকে পূর্ণাঙ্গ বিশ্লেষণ করার ক্ষমতা আমার নেই।অন্তপ্রাণ বন্ধু হিসেবে তাঁকে ঘিরে, আমি আমার মুগ্ধতার কথাই লিখব, যতটুকু পারি।
লায়ন মোঃ মুজিবুর রহমান এর জন্ম কক্সবাজার জেলার পেকুয়া উপজেলায় হলেও যৌবণের অনেক গুলো বছর চট্টগ্রামেই কেটেছে।বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার পাশাপাশি তিনি বিভিন্ন শিক্ষামূলক কার্যক্রমের সাথে জড়িয়ে যান।পরবর্তীতে পড়ালেখা শেষ করে শিক্ষাবৃত্তিসহ উচ্চশিক্ষা প্রত্যাশী শিক্ষার্থীদের বিদেশ পাঠাবার ব্যবস্থা করেন,নিজেও বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করে শিক্ষার মান,শিক্ষা পদ্ধতিসহ শিক্ষার বিভিন্ন ইনগ্রেডিয়েন্স নিয়ে নীরবে গবেষণা করেন আর চেতনে অবচেতনে নিজ এলাকায় একটি আন্তর্জাতিক মান সম্পন্ন বিশ্ববিদ্যালয় গড়ার স্বপ্ন দেখেন।আমি খুব কাছ থেকে দেখেছি শত প্রতিকূলতা ও আর্থিক দীনতাকে সহনীয় করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় তিনি কতোটা নিমগ্ন ছিলেন।
এ পর্যন্ত যতোটা পথ পরিভ্রমণ করেছি তাঁর সাথে,তাঁর পরিবারের সাথে সৃজনের অলিতে-গলিতে তাতে নির্দ্ধিধায় বলতে পারি তাঁর নাম স্বর্ণাক্ষরে লিখা থাকবে কক্সবাজারের ইতিহাসে।কারন অত্রাঞ্চল থেকে তিনিই প্রথম বিশ্ববিদ্যালয়ের(কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি)সূচনা করেন।আমরা স্বীকার করি কিংবা না করি এটাই সত্য,এটাই ইতিহাস।
তার এ যাত্রায় যারা শুভার্থী হিসেবে যে ক’জন মানুষ খুব কাছে ছিলেন সে সত্যটি তাঁর সহধর্মিনী মাহবুবা শিউলী এর একটি লেখা থেকে স্পষ্ট হয়েছে।তিনি লিখেছেন-”আর তাঁর এই যুদ্ধে সহযোদ্ধা হিসেবে যারা ছিলেন, যাদের নাম উল্লেখ না করলেই নয়। বিশ্ববিদ্যালয় এত সহজ বিষয় নয়। চাইলেই বিশ্ববিদ্যালয় হয়না। অনেক কাগজপত্র তৈরির কাজ রয়েছে যার জন্য মেধাবী,দক্ষ, অভিজ্ঞ একটি দলের প্রয়োজন হয় যারা পর্দার অন্তরালে থেকে নিরলস ও নিঃস্বার্থভাবে কাজ না করলে হয়তো কৌশলগত ভুলের কারণেও বিশ্ববিদ্যালয়টি নাও হতে পারতো!!!
তাই যতদিন কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি বেঁচে থাকবে ততদিন প্রতিষ্ঠাতা জনাব লায়ন মোঃ মুজিবুর রহমানের সাথে যাদের নাম স্বর্ণাক্ষরে লিখা থাকবে তাঁরা হলেন সম্মানিত উপদেষ্টা জনাব মোঃ খুরশিদুর রহমান, উপদেষ্টা জনাব তানভীর মোঃ হায়দার আরিফ ও উপদেষ্টা জনাব সাদাত জামান খান মারুফ।
আর একজন শ্রদ্ধাভাজন ব্যক্তিত্বের নাম উল্লেখ না করলেই নয়, তিনি হলেন ট্রাস্টি বোর্ডের সম্মানিত সভাপতি জনাব সালাউদ্দিন আহমেদ সিআইপি। তাঁর সার্বিক সহযোগিতায় বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন ও সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের অনুমোদন পেয়ে কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির যাত্রা শুরু হয়।
তাছাড়া ট্রাস্টি সদস্য জনাব সাইফুর রহমান , শুভাকাঙ্ক্ষী পুলিশ ইন্সপেক্টর জনাব জাকির হোসেন, শুভাকাঙ্ক্ষী বন্ধু মোঃ জসীম উদ্দিন, ট্রাস্টি বোর্ডের সম্মানিত সকল সদস্যগণ, ট্রেজারার শ্রদ্ধেয় চৌধুরী মঞ্জুরুল হক স্যার, ইউনিভার্সিটির প্রতিষ্ঠালগ্নের সময় কর্মরত যে সকল কর্মকর্তাগণ বিশেষ করে কুতুব মেহনাজ রুহী, পারেল সামিহা সারিকা, মোঃ আরিফ, এন এম জেড সেলিম, আব্দুল মালেক এবং সম্মানিত সকল শিক্ষকবৃন্দ ও এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষার্থী ও সকল কর্মচারীদেরও অবদান রয়েছে”।কিন্তু যে নামটি এ লেখায় বাদ পড়েছে তিনি হচ্ছেন লায়ন মোঃমুজিবুর রহমান এর সকল কাজের প্রেরণার উৎস,এ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার নেপথ্যের কারিগর তাঁর সহধর্মিনী মাহবুবা শিউলী। শিক্ষার্থীদের চেতনাজগতকে বিকশিত করে,আলোকিত, সমৃদ্ধ ও উন্নতমূল্যবোধসম্পন্ন মানুষ হিসেবে গড়ে তুলবার জন্য এ ধ্রুপদী রমণীর নিরলস প্রচেষ্টা দেখে আমি মুগ্ধতায় আচ্ছন্ন হয়ে আছি।
সাগর দেশের মানুষ লায়ন মোঃমুজিবুর রহমান এতোটা ইনটেলেকচুয়েল,এতোটা উদার মানুষযে,যেন বঙ্গোপোসাগরের বিশালতা তাঁকে ছুঁয়েছে।আকাশের মত উদার,সাগরের মত বিশাল,আর পাহাড়ের মত দৃঢ়চেতা সম্পন্ন মানুষ তিনি।পরাশ্রীকাতর মনোভাব তিনি পছন্দ করতেন না বলে নেতিবাচক কোনো আড্ডায়ও খুব একটা যাননা।তিনি নীরবে কাজ করেন,সৃজন করেন,ঘর সংসার করেন,অত্যন্ত পরিশ্রমি মানুষ তিনি।আমার মতে তাঁর স্বভাবটা এমনযে যেন কারো সাথে তাঁর ফুল ছেরার সম্পর্ক নেই, ঢিল ছোরারও নেই।তাই তিনি তাঁর মত থাকেন নিভৃতচারী মানুষ হিসাবে।
ভাবীও তেমন একজন গুনী মানুষ।নারীত্বের মহিমায় মহিয়সি,স্নেহ প্রেম ভালোবাসায় তপস্বিনী এক অনন্যসাধারন রমণী।একজন আবৃত্তি শিল্পী,শিক্ষাব্রতি রমণী।শব্দচয়নে, জীবনবোধে, শব্দালংকারের নান্দনিকতায়, বর্ণনায় অসামান্য আর ধ্রুপদী রমণী মাহবুবা শিউলী। কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি,লরেল কালচারাল একাডেমী নিয়ে তাঁরও যেন স্বপ্নের শেষ নেই।রাত–দিন খেটে মরছেন এ দুজন মানুষ।রাত বিরাতেও রান্নার হাঁড়ি সচল ছিল,জ্বালাতন করেছি আমরাও।
স্বপ্ন একটাই আলোকিত মানুষ গড়া,তাদের শিক্ষার্থীরা যেন স্বপ্নের সমান বড় হয়।দেশে বিদেশে খ্যাতী অর্জন করে।আন্তরিকভাবে প্রত্যাশা করেন শিক্ষার্থীদের জীবনটা যেন সুন্দর সার্থক ও অর্থবহ হয়। শক্তিমান নেতৃত্ব দিয়ে শিক্ষার্থীদের সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিয়ে যাবার জন্য লায়ন মোঃমুজিবুর রহমান ছিলেন মহানুভব কারিগর।
কোথায় যেন পড়েছিলাম “কেউ কেউ এমন শেষ দেখেন যেখানে কোনো আশা নেই, আবার কেউ কেউ এমন আশা দেখেন যার কোনো শেষ নেই।” জানি না কথাটা কে বলেছিলেন, তবে ‘হোপলেস এন্ড’ আর ‘এন্ডলেস হোপ’ নিয়ে বিশ্ব বহু আগেই দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে আছে। থাকবে অনন্তকাল। জগতের শত দুর্বিপাক, শত ঝড়ঝাপটার মধ্যেও কেউ কেউ তাই আশায় বসতি করে, আর কেউ কেউ দুর্ভাগ্যকে গালমন্দ করেই সময় কাটায়, সর্ষের মধ্যে দেখে হাজার হাজার ভূত।আর লায়ন মোঃমুজিবুর রহমান ছিলেন আশা জাগানিয়া মানুষ,স্বপ্নবান মানুষ।হাজারো কন্টক মাথায় নিয়েও স্বপ্ন দেখতেন, স্বপ্ন দেখাতেন।গিল স্টার্ন-এর একটা মন্তব্য মনে পড়ছে: “আমাদের সমাজে আশাবাদী আর হতাশাবাদী উভয়েরই অবদান আছে, আশাবাদী বিমান বানায় আর হতাশাবাদী প্যারাশুট বানায়!” মুজিব ভাইয়ের ক্ষেত্রেও দেখেছি তাঁর কিঞ্চিৎ হতাশার মাঝেও সৃষ্টিশীল কিছু ছিল।
কিছুদিন আগে লরেল কালচারাল একাডেমীতে এক আড্ডায় লায়ন মুজিবুর রহমান ভাই প্রসংগক্রমে বললেন– তিনি নিরন্তর স্বপ্ন দেখেন আর আশা নিয়ে বেঁচে আছেন।তাঁর ম্যারাথন হোপ দেখে টেরি ফক্সের কথা মনে পড়লো। ক্যান্সারের সংক্রমণে এক পা হারানোর পরও ক্যান্সারের বিরুদ্ধে মানুষকে জাগানোর সংকল্প নিয়ে মাত্র এক পায়ে কানাডার এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে দৌড়াতে শুরু করেছিলেন ফক্স।সাড়ে তিন হাজার মাইল দৌড়ানোর পর আর পারেননি, আলিঙ্গন করতে বাধ্য হয়েছিলেন মৃত্যুকে। ফক্স জানতেন কী পরিণতি হবে তাঁর, তবু হাল ছাড়েননি। বিশ্বখ্যাত তাঁর সেই দৌড়ের নাম দিয়েছিলেন ‘ম্যারাথন অব হোপ’। লায়ন মো: মুজিবুর রহমান ভাইও সেই ম্যারাথন অব হোপ নিয়েই আছেন।এখনও তাঁর সীমাহীন ব্যস্ততার রাজ্যে অন্তহীন ছোটাছুটি।হয়তো ফক্সের মত আমৃত্যু এ দৌড় তাঁর চলতে থাকবে।
লায়ন মোঃমুজিবুর রহমান ভাইকে কাছ থেকে যতোটা দেখেছি তাতে বলা যায়, অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বিশ্বাসী এ মানুষটি আচার আচরণে প্রাণবন্ত, সৌহার্দপূর্ণ।মানসিক ঐশ্বর্যে সচ্ছল এ কথা নির্দ্ধিদায় বলা যায়।তাঁর অন্তর্লোক আলোকিত এবং উজ্জ্বল সময়স্রোতে ভাসমান।আমি মনে করি
প্রাণশক্তিতে ভরপুর মানুষ কৌতূহলী হয়,আগ্রহী হয়,সব সময় কিছু একটা করতে চায়,যে কোনো জিনিসের ভালো দিকটা দেখে প্রথমে ,নিজের ভুল/দোষ স্বীকার করে নেয় সহজে।অন্যের সফলতা দেখে হিংসা করেনা,সব কিছুর পেছনে ষড়যন্ত্র খুঁজে বেড়ায়না ,অন্যরা কী করছে সেটা না ভেবে নিজেই এগিয়ে আসে যে কোনো কাজে,ভাগ্যের উপর নির্ভর করে বসে থাকেনা এবং আশে পাশের সবার মধ্যে নিজের প্রাণশক্তি সঞ্চারিত করে।একজন সফল মানুষ আর একজন সফল মানুষকে হিংসা করবেনা।
লায়ন মোঃ মুজিবুর রহমান হচ্ছেন তেমন একজন মানুষ।তাঁর সারা জীবনের স্বপ্ন ছিল শিক্ষার প্রদ্বীপ জ্বালানো,সে আলোয় উদ্ভাসিত মানুষগুলো এবং তাদের বংশধরেরা সারা দেশে ছড়িয়ে পড়বে,এটাই যেন তাঁর আনন্দ।
শিক্ষার আলো জ্বেলে তিনি ধন্য হতে চাননা,কারো কাছে তাঁর পার্থিব কোনো চাওয়াও নেই,তিনি বুঝতে পেরেছিলেন একমাত্র সুশিক্ষিত লোকেরাই পারেন একটি জাতির উত্তোরণ ঘটাতে।তাই তিনি অশিক্ষার অন্ধকার থেকে শিক্ষার আলো জ্বালাতে,শিক্ষার্থীদের সচেতন করে তুলতে আরাম আয়াশ বিসর্জন দিয়ে যে ত্যাগ স্বীকার করে যাচ্ছেন তাতে তিনি নিজ মহিমায় ভাস্বর হয়ে থাকবেন।
কর্মহীন জীবন মৃত্যুর ভিতর চিরবিলীন হয়ে থাকে,অথচ কর্মই মানুষকে পরিচিত করে তোলে এ ধরার বুকে,কর্মহীন মানুষ শত বছর বেঁচে থেকেও অমরত্ব লাভ করতে পারেনা,মৃত্যুর মধ্যেই ঘটে তার জীবনের পরিসমাপ্তি,কিন্তু কর্ম উপযোগী মানুষের বিন্দুমাত্র অবসর নেই,সময়কে কাজে লাগিয়ে তাই তারা জীবনে সর্বশ্রেষ্ট ধন অর্জনে হন সদা তৎপর।লায়ন মুজিবুর রহমানও তেমনি একজন কর্মদ্যোমী পুরুষ।কিন্তু দুঃখ জনক হলেও সত্যযে,কৃ্তীমান ব্যাক্তিদের সৃষ্টি ও স্মৃতিগুলোকে অনেক সময় আমাদের সমাজ কেন যেন স্বীকৃ্তি দিতে চায়না।অসফল মানুষ স্বভাবতই কিছুটা হীনমন্যতাবোধে ভোগে, এবং সুযোগ পেলেই তার দুঃখ-কষ্টের কারণ অন্যের উপর চাপিয়ে দিতে চায়।আমাদের প্রাণের বড়ই অভাব। এ অভাব মনে যেমন, শরীরেও তেমন।
পরিশেষে বলবো, একজন প্রমিথিউস লায়ন মোঃমুজিবুর রহমান ।সুদীর্ঘ সামাজিক সাংস্কৃতিক ও ব্যবসায়িক জীবনের বহু ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা তাঁকে করেছে ঋদ্ধ।তাঁর ভিতরে রয়েছে নান্দনিকতাবোধ,সভ্যতার এ বিপন্ন সময়েও তিনি চেতনার অন্যতম স্তরে উত্তরণ করছেন।
প্রত্যাশা করি তিনি যেন সৃষ্টিতত্ত্বের মহিমা হৃদয়াঙ্গম করে সত্য,সুন্দর,সততা ও সরলতাকে সামনে রেখে,নান্দনিক বাস্তবতায় তাঁর বোধ ও অনুভূতিতে দৃশ্যময় প্রানময়তা সৃষ্টি করতে পারেন।মহান আল্লাহর কাছে তার সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘজীবন কামনা করছি।
বিগত ১৫ ডিসেম্বর ২০১৬ খ্রীষ্টাব্দে আমি গিয়েছিলাম সে স্বপ্নের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি দেখতে।প্রথমেই সাক্ষাত হলো জনসংযোগ কর্মকর্তা কুতুব উদ্দিন সাহেবের সাথে। হাস্যোজ্জ্বল মেধাবী এ মানুষটির সাথে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পরিচয় হলেও সেদিনই প্রত্যক্ষ সাক্ষাত হলো।আন্তরিকভাবে এগিয়ে এলেন,তার সাদর সম্ভাষন দেখেই বুঝতে পারলাম ভিতরের মানুষগুলোও অনেক আন্তরিক হবে।এরপর দেখা হলো বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন সিদ্দিকী সাহেবের সাথে।অসাধারন একজন প্রাণবন্ত বিনয়ী মানুষ।আমার আব্বা বলতেন ‘সুবচনে ভালোবাসা বিনয়ে মর্যাদা,ত্যাগে নেতৃ্ত্ব,অনুগ্রহ ভাতৃত্ব টেনে আনে’।মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন সিদ্দিকী সাহেবের কাছ থেকেই আমাদের অনেক শেখার আছে,শেখার আছে শিক্ষা মানুষকে কিভাবে বিনয়ী করে।এরপর দেখা হলো ট্রাস্টি মেম্বার ও অনারারি ডিরেক্টর ফাইন্যান্স আব্দুস সবুর সাহেবের সাথে।নিরেট একজন ভাল মানুষ,সহজ সরল প্রাণবন্ত মানুষ।একে একে দেখা হলো আইন বিভাগের প্রভাষক জিয়াউল হক,মায়সুমা সুলতানা,বানিজ্য অনুষদের মেধাবী ও প্রাণবন্ত শিক্ষক এ এস এম সাইফুর রহমান,শাহিদা তালুকদার রাহি,কম্পিউটার সাইন্স এর প্রভাষক আব্দুল মতিন, অফিসার মেহনাজ রুহী ,লাইব্রেরীয়ান মোতালেব হোসেন জীবন,ল্যাব এসিস্ট্যান্ট রফিক উদ্দিন এর সাথে।প্রত্যেকের আন্তরিকতা আমাকে মুগ্ধ করেছে।
কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির পড়াশুনাঃ
মানুষের জীবনে যে পাঁচটি মৌলিক অধিকার রয়েছে তার মধ্যে শিক্ষা অন্যতম। শিক্ষাকে বলা হয়ে থাকে জাতির মেরুদন্ড।কোন জাতি নিজেকে পরিপূর্ণভাবে বিকশিত ও পরিচিত করতে চাইলে শিক্ষা ও গবেষণার কোন বিকল্প নেই। এই শিক্ষা বলতে শুধুমাত্র সাক্ষরতাকে বুঝায় না বরং সামর্থনুযায়ী সর্বোচ্চ শিক্ষাকে বুঝায়। বহুকাল আগে থেকে একথা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়েছে যে বাংলাদেশের মানুষ সুযোগ পেলে অনেক বড় বড় কাজ করতে পারে, রাখতে পারে শিক্ষা ও গবেষণায় বিশাল অবদান। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় হলো কিছুদিন আগ পর্যন্ত এ সুযোগ তথা উচ্চশিক্ষার সুযোগ পেত অল্পসংখ্যক ছাত্র-ছাত্রী।জনসংখ্যার তুলনায় দেশের মধ্যে উচ্চশিক্ষালয় তথা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা কম থাকয় অনেক সম্ভাবনাময় ছাত্র-ছাত্রী শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়। গুটিকয়েক অর্থবিত্তশলী লোকের ছেলেমেয়েরা দেশের বাইরে যেত যার ফলে দেশ থেকে চলে যেত অনেক বেশি মুদ্রা।
এই দুই সমস্যার সমাধান ও দেশের মধ্যে সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিতে ১৯৯২ সাল থেকে এক বৈপ্লবিক অধ্যায়ের সূচনা হয়। সরকারের কলোপযোগী সিদ্ধান্ত ও কিছু মহৎ ও দুরদৃষ্টিসম্পন্ন লোকের উদ্যোগে দেশে প্রতিষ্ঠিত হয় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় যা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় নামে অধিক পরিচিত।তারই ধারাবাহিকতাই পর্যটন শহর কক্সবাজারে গড়ে উঠেছে কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি।
কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অনুমোদন পেয়েছে ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৩,মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা উদ্ভোধন করেন ২৩ ফেব্রুয়ারী ২০১৪ খ্রীস্টাব্দে।
একথা অনস্বীকার্যযে,প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষাখাতে এনেছে এক বিশেষ বিপ্লব। যেহেতু বাংলাদেশের মানুষ পড়াশুনা শেষে ভালো কর্মক্ষেত্রের সন্ধানে ব্যস্ত থাকে, সেহেতু এদেশের মানুষের জন্য দরকার যুগোপযোগি ও বাজারমুখি শিক্ষা ব্যবস্থা। এই চিন্তাকে মাথায় রেখে কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি খুলেছে সম্পূর্ণ যুগোপযুগি বিষয়সমূহ যেমন-বিবিএ, কম্পিউটার সায়েন্স, আইন, ইংরেজি সাহিত্য, লাইব্রেরী সাইন্স ইত্যাদি। এসব বিষয় থেকে পাশা করার পর সহজে একজন ছাত্র বা ছাত্রী চাকুরি বাজারে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারে।
সিলেবাস ও কারিকুলম
এ বিশ্ববিদ্যালয়ের পঠিত বিষয়সমূহের সবচেয়ে বড় সুযোগ হলো তাদের সিলেবাস কারিকুলাম। যেহেতু কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ছাত্র-ছাত্রীদেরকে সর্বোচ্চ জ্ঞানে প্রতিষ্ঠিত করতে চায়, সেহেতু এ বিশ্ববিদ্যালয়র সমস্ত বিষয়ের সিলেবাস প্রনয়ন করা হয়েছে সম্পূর্ণ আন্তর্জাতিক মানের। অধিকন্ত সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে প্রয়োজনে প্রতিটি বিষয়ের সিলেবাসকে পরিবর্তন করা হয় যাতে ছাত্র-ছাত্রীরা আন্তর্জাতিক মানে আপডেটেড হয়ে থাকতে পারে। তবে দেশের কথা ভুলে যায়নি কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি কতৃপক্ষ, দেশের কৃষ্টি-কালচার,ইতিহাস, সাহিত্য সংশ্লিষ্ট সাবজেক্ট নিয়েও ভাবছে কতৃপক্ষ।তাই একদিকে যেমনি কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ছাত্র-ছাত্রীরা আন্তর্জাতিক মানের হচ্ছে, তেমনি দেশের ব্যাপারে পর্যপ্ত জ্ঞান অর্জন করেছে।
শিক্ষার মাধ্যম,পরিবেশ ও সুযোগ-সুবিধাঃ শিক্ষার মাধ্যমও পরিবেশ অক্ষুণ্ন রাখতে কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি কতৃপক্ষ সদা সচেষ্ট। কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি শিক্ষার মাধ্যম হিসাবে ইংরেজিকে বেছে নিয়েছেন। শুধুমাত্র ইংরেজি ভাষার লিখিত বই ও পরীক্ষার খাতাই নয়, বরং লেকচার প্রদান, আলোচনা, উপস্থাপনা, পরিবেশনাসহ সকল বিষয়ে ইংরেজি ব্যবহার করা হয়। ফলে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা নিজেদেরকে গড়ে তুলতে পারে আন্তর্জাতিক মানের।বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ ক্লাসরুম তাপানুকুল (এসি)। বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে বিশাল লইব্রেরি যাতে সংগৃহীত রয়েছে দেশি-বিদেশি পর্যাপ্ত বইপত্র।ছাত্র-ছত্রীদের জন্য রয়েছে জ্ঞানার্জনের অবারিত সুযোগ ,রয়েছে ইন্টারনেট সংযোগসহ পর্যাপ্ত কম্পিউটার ল্যাব, যা থেকে ছাত্র-ছাত্রীরা নিতে পারে বিনামূল্যে বিশেষ সুযোগ। সর্বক্ষেত্রে রয়েছে মাল্টিমিডিয়া ও ওভারহেড প্রজেক্টর ব্যবহার করে ক্লশ নেয়ার সুযোগ, তাই জটিল চিত্র প্রদর্শন ও আধুনিক মানের শিক্ষাপদ্ধতি খুব সহজেই উপস্থাপন করা হয় কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি তে।
শিক্ষকদের মান ও শিক্ষাপদ্ধতিঃ বর্তমানে কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে রয়েছে নামিদামী শিক্ষকবৃন্দ।ভাইস চ্যান্সলর হিসেবে রয়েছেন ভাষা বিজ্ঞানী ড.আবুল কাশেম। দেশ-বিদেশের উচ্চ ডিগ্রিসম্পন্ন অনেক শিক্ষক রয়েছে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে। আর্থিক সন্মানী ও পরিবেশের কারণে ভালো রেজাল্টধারী শিক্ষকগণ নিযোজিত আছেন এ বিশ্ববিদ্যালয়ে।নিয়মিত পাঠদান, সময়নুবর্তিতা, ক্লাসের বাইরে ছাত্র-ছাত্রীদের সময়দান, আধুনিক ও আন্তর্জাতিক জ্ঞান দান করা প্রতিটি শিক্ষকদের নিয়মিত রুটিন কাজ হিসাবে ধরে নেয়া হয়, তাই কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি শিক্ষকদের মান যেমনি ভালো তেমনি ছাত্র-ছাত্রীরা ভালো সুযোগ পেয়ে থাকে বলে আমার মনে হয়েছে।এছাড়া পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক প্রবীন ও দক্ষতাসম্পন্ন শিক্ষক খন্ডকালীন অথবা পূর্ণকালীন সময়দান করে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মানকে করছে আরো উন্নত।
সেশনজট ও রাজনীতি ঃ আমাদের দেশে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম সমস্যা হলো সেশনজট, যা সধারনত হয়ে থাকে রাজনৈতিক সংঘাত, স্বার্থসিদ্ধি এবং ক্লাস ও পরীক্ষার দীর্ঘসূত্রিতার জন্য। যার ফলে এদেশের ছাত্র-ছাত্রীদের অনেক মূল্যবান সময় নষ্ট হয়ে যায় জীবন থেকে। এসব কিছু মাথায় রেখে কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি তাদের ক্যাম্পাসকে করেছে রাজনীতি মুক্ত; সময়মত ক্লাস, পরীক্ষা ও রেজাল্ট প্রদানের জন্য এ বিশ্ববিদ্যালয়ে সেশনজট কথাটি কল্পনা করতেও পারে না। একজন ছাত্র বা ছত্রী অতিসহজে নির্দ্বিধায় যথসময়ে তার পড়াশুনা শেষ করতে পারে।
চাকুরির বাজার ঃকক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি বাজার চাহিদার সাথে সংগতি রেখে বিভিন্ন বিষয় খুলেছে,তাই এসকল বিষয়ে পড়াশুনা শেষে তাদের ছাত্র-ছাত্রি দেশে বিদেশে প্রতিষ্ঠিত কোম্পানিতে সন্মানজনক চাকুরি করছে। বিশেষ করে লাইব্রেরী সাইন্স এর শিক্ষার্থীদের ১০০% চাকুরী করছে বলে রেজিস্ট্রার জানিয়েছেন।
সীমাবদ্ধতা ঃএতোবড়ো ইস্টাবলিসমেন্ট পরিচালনা করার জন্য যে পরিমাণ শিক্ষার্থীর প্রয়োজন ছিল সে তুলনায় শিক্ষার্থী অপ্রতুল মনে হয়েছে।আমি মনে করি এ বিশ্ববিদ্যালয়ে মান, ছাত্র-ছাত্রীদের মান, ভবিষ্যতের অফুরন্ত সুযোগ, আন্তর্জাতিক ও জাতীয় ক্ষেত্রের কথা চিন্তা করে যে কোন ছাত্র-ছাত্রী কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিকে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্র হিসাবে বেছে নিতে পারেন।এ বিষয়ে কক্সবাজার জেলার উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান,স্থানীয় গণমাধ্যম,সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে আরও ব্যাপক প্রচারের প্রয়োজন রয়েছে।কথায় বলে প্রচারেই প্রসার।স্থানীয় অসাধু নেতাদেরও কিছু ষড়যন্ত্র ও অসহযোগিতার নির্যাস আমি পেয়েছি,যা মোটেই প্রত্যাশিত নয়।এ ব্যাপারে সুশীল সমাজের ইতিবাচক সহযোগীতার প্রয়োজন রয়েছে।
আগামীদিনের কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ঃ
মানব সভ্যতা বিকাশের ক্ষেত্রে শিক্ষার ভূমিকা অপরিসীম। একটি জাতি কেমন উন্নত তা নির্ভর করে তার শিক্ষাব্যবস্থার উপর। এই পৃথিবীতে সব কিছুই পরিবর্তনশীল। এই পরিবর্তনের সাথে শিক্ষাব্যবস্থারও পরিবর্তন ঘটে। একটি দেশের আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থা সে দেশের জনসংখ্যাকে জনসম্পদে পরিণত করে। তাই আধুনিক বিশ্বে দেখা যায় শিক্ষাখাতে তাদের বরাদ্ধ সবচেয়ে বেশি। মানুষের মস্তিষ্ক একটি সুপার কম্পিউটারের চেয়েও বহুগুণ শক্তিশালী। আশা করা যায়, কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষা পদ্ধতি এমন হবে যে, শিক্ষার্থীরা প্রযুক্তির সহায়তায় তার এই উর্বর মস্তিষ্ককে কাজে লাগিয়ে উন্নতির চরম শিখরে পৌছবে।তথ্যপ্রযুক্তির কল্যাণে গতি এসেছে সর্বত্র। এই গতি দরকার পাঠ্যপুস্তকেও। শিক্ষার্থীর মননের গতির সাথে তাল মিলিয়ে পাঠ্যপুস্তকে গতি না আনতে পারলে শিখন-শেখানো কার্যক্রম ফলপ্রসু হবে না। তথ্য ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির ফলে মানুষের চিন্তা ও জ্ঞানের মিথস্ক্রিয়া ঘটেছে। জ্ঞানের মিথষ্ক্রিয়ার ফলে মোট জ্ঞানের পরিমাণ খুব দ্রুত বেড়ে যাবে। পূর্বে যেখানে জ্ঞানের পরিমাণ বাড়তে হাজার বছর লাগতো, বর্তমানে সেখানে জ্ঞানের পরিমাণ বাড়তে প্রয়োজন হবে মাত্র এক মাস।
কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষা পদ্ধতি, উন্নত ল্যাব,তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার দেখে আমি রীতিমত অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে ছিলাম।বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন,জনসংযোগ কর্মকর্তা কুতুব উদ্দিন সাহেব আমাকে সব কয়টি রুম, ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি,ল্যাব দেখিয়েছেন,কম্পিউটার সাইন্স এর ক্লাস রুমেও ঢুকে মেধাবী শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সাক্ষাত পেলাম।অবচেতন মনেই এ বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য এক ধরনের টান অনুভব করলাম।মূলত সে তাগিদ থেকেই আমি আগামীদিনের কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিকে যেভাবে দেখতে চাই তার একটি খসড়া প্রস্তাবনা তুলে ধরলাম।যেহেতু এটি আমার স্বল্প সময়ের দেখার আবেগীয় অনুভূতি সেহেতু এ প্রস্তাবনা আমার দিক থেকেও পরিবর্তন পরিবর্ধন যোগ্য।
প্রস্তাবনা সমূহ নিম্নরুপঃ
১)আধুনিক প্রযুক্তির ছোঁয়ায় বিভিন্ন স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পরিবেশের আমুল পরিবর্তন ঘটছে।শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গুলো হতে যাচ্ছে তথ্যপ্রযুক্তিসমৃদ্ধ। তাই কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে ডিজিটাল লাইব্রেরি থাকার প্রস্তাব করছি। সমস্ত বই থাকবে পিডিএফ ফরমেটে।শিক্ষার্থীরা এখানে বসে কম্পিউটার চালু করেই পড়াশুনা শুরু করবে। তাদের এই কম্পিউটারে থাকবে ইন্টারনেটের সুবিধা। এই কম্পিউটার থেকেই ইন্টারনেটের মাধ্যমে পৃথিবীর সকল দেশের শিক্ষার্থীরা কী শিখছে তা সে ইচ্ছা করলেই দেখতে পারবে। এই শিক্ষার্থীরা হবে গ্লোবাল ভিলেজের অর্ন্তগত। তারা ইন্টারনেটের মাধ্যমে পৃথিবীর যে কোনো দেশের যে কোন শিক্ষা পদ্ধতি সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করতে পারবে।এতে করে শিক্ষার দ্বার হবে উন্মুক্ত।
২) শিক্ষকরা হবেন তথ্যপ্রযুক্তিতে পারদর্শী। এই শিক্ষকগণ প্রযুক্তির কল্যাণে একই সময় সকল শিক্ষার্থীকে পড়াতে সক্ষম হবেন। প্রতিটি শিক্ষকের থাকবে ব্যক্তিগত ওয়েব সাইট। এই সাইটে তাঁরা তাদের প্রতিদিনের লেকচারগুলো আপলোড করবেন। কোন কারণে যদি কোনো শিক্ষার্থী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যেতে ব্যর্থ হয় তবে সে এখান থেকে ডাউনলোড করে সেই বিষয়টি শিখে নিতে পারবে।শিক্ষকের দায়িত্ব হবে শিক্ষার্থীর ভেতর সৃজনশীলতা সৃষ্টি করা। শিক্ষকরা কারিকুলাম ও টেকনোলজির মধ্যে সমন্বয় সাধন করবেন।
৩) ছাপানো বই এর পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের বইগুলো হবে ডিজিটাল। মোবাইলের ছোট একটা মেমোরি কার্ডের মধ্যে তাদের সারাজীবনের পাঠ্যবইগুলো পকেটে নিয়ে ঘুরতে পারবে।শিক্ষার্থীরা শুধু পাঠ্য বইপড়েই শিখবে না। তাদের শেখার উৎস হবে বহুমাত্রিক। যেমন- পত্রিকা, টেলিভিশন, রেডিও, ইন্টারনেট, কম্পিউটার, ব্লগ ইত্যাদি। শিক্ষার্থীরা এসব মাধ্যম থেকে প্রাপ্ত তত্ত্ব, তথ্য শিক্ষকের সাথে আলোচনার মাধ্যমে তাদের জ্ঞানভাণ্ডার সমৃদ্ধ করবে। সুতরাং এক্ষেত্রে শিক্ষক যদি এই সমস্ত মাধ্যমের সাথে সংশ্লিষ্ঠ না থাকেন, তবে শিক্ষার্থীর সাথে শিক্ষকের মিথষ্ক্রিয়া হবে না। তাই শিক্ষককে অবশ্যই এই মাধ্যমগুলোর পরিচিত হতে হবে। শিক্ষার্থীরা হবে ডিজিটাল লার্নার। এক্ষেত্রে শিক্ষার্থীর পাশাপাশি শিক্ষককেও ক্রিয়েটিভ হতে হবে।
৪) শিক্ষাব্যবস্থার পাঠ্যসূচিতে তথ্যপ্রযুক্তির ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে।প্রত্যেক বিভাগের শিক্ষার্থীদের তথ্যপ্রযুক্তির জ্ঞান দিতে হবে। এই সিলেবাস হবে গবেষণাধর্মী। তারা যেহেতু গ্লোবাল সিটিজেনের সদস্য হবে সেহেতু তাদেরকে শিখতে হবে কী করে সবার সাথে যোগাযোগ রক্ষা করতে হয়। একুশ শতকের শিক্ষার্থীর সিলেবাসে থাকবে এমন কিছু যা শিক্ষার্থীকে চিন্তা করতে শেখাবে এবং সমস্যা সমাধানে পারদর্শী করবে।
৫)আনন্দের সাথে শিখবে শিক্ষার্থীরা।শিক্ষায় বিমূর্ত বলতে কিছু থাকবে না। শিক্ষার সব কিছুই শিক্ষার্থীর কাছে মূর্ত হবে। প্রযুক্তি মানুষকে আশ্চর্যজনকভাবে সুযোগ করে দিচ্ছে কোনো কিছু করার জন্য। আমাদেরকে এই সুযোগকে কাজে লাগাতে হবে। নতুন প্রজন্মের জন্য এই সুযোগ কাজে লাগানোর ব্যবস্থা করে দিতে হবে। শিখন-শেখানো প্রক্রিয়া যদি হয় আনন্দজনক, তবে শিক্ষার্থীরা অতি সহজেই অল্প সময়ে অনেক কিছু শিখে ফেলতে পারবে।
৬)শ্রেণীকক্ষে চলবে অংশগ্রহণ পদ্ধতির শিখন-শেখানো কার্যক্রম। শ্রেণীকক্ষে ব্যবহার করা হবে কম্পিউটার,মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর ও ইন্টারনেট। ফলে শিখন-শেখানো কার্যক্রম পরিপূর্ণতা লাভ করবে ও আনন্দজনক হবে। এখানে শিক্ষকগণ পাঠদান এর পাশাপাশি শিখন-শেখানো কার্যক্রমে গাইডের ভূমিকা পালন করবেন। শিক্ষার্থীরা যে তথ্যগুলো বিভিন্ন মাধ্যম থেকে প্রাপ্ত হবে, তা নিয়েই তারা শিক্ষকের সাথে আলোচনা করবে। শিক্ষক শিক্ষার্থীদেরকে আলোচনার মাধ্যমে সঠিক তথ্য উদ্ঘাটনে সাহায্য করবেন। শিক্ষক শিক্ষার্থীদেরকে শেখাবেন কীভাবে সমস্যার সমাধান করতে হয়। শুধু তথ্য মুখস্থ নয়। তথ্য দিয়ে কীভাবে সমস্যার সমাধান করতে হয় এইটিই হবে শিক্ষার আসল উদ্দেশ্য। এ ব্যাপারে কনফুসিয়াস বলেছেন Learning without thinking is useless. অর্থাৎ চিন্তাবিহীন শিক্ষা কোনো কাজে আসে না। একুশ শতকের শিক্ষার্থীরা হবে মুক্তচিন্তার অধিকারী। তারা তাদের চিন্তাগুলো শিক্ষকের চিন্তার সাথে মিলিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যাবে।
৭) একসময় এ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে চালু হবে ভার্চুয়াল শিক্ষা-এ যেন এক কল্পনার জগৎ। শিক্ষার্থী ক্লিক করেই প্রবেশ করবে তার শেখার জগতে। এ এক অসীম জায়গা। এখানে বিমূর্ত বলে কিছু নেই। বিমূর্ত সব কিছুই মূর্ত হয়ে তার সামনে ভেসে আসবে। শিক্ষার্থীর কল্পনার জগত হবে উন্মুক্ত। এখানে অসম্ভব বলে কিছুই নেই। শিক্ষার্থী সেই জগতের সব কিছু নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা করতে পাবে। থাকবে উন্নত পরীক্ষাগার আর যন্ত্রপাতি ও বিভিন্ন ধরনের ক্যামিকেল। শিক্ষার্থীরা এই ভার্চুয়াল যন্ত্রপাতি আর ভার্চুয়াল ক্যামিকেল দিয়েই তার গবেষণা করবে। শিক্ষার্থীদের জন্য তৈরি করা হবে ভার্চুয়াল রোবট শিক্ষক। এই শিক্ষকের মেমোরিতে থাকবে নানা ধরনের এনসাইক্লোপিডিয়া। ভার্চুয়াল রোবট শিক্ষক হবে শিক্ষার্থীর বন্ধু। এই রোবট শিক্ষক শিক্ষার্থীকে গাইড করবে। ফলে কোনো পাঠ বোঝার জন্য শিক্ষার্থীকে শিক্ষকের কাছে যেতে হবে না। এই শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষার্থীর সময় অর্থ দুটোই বাঁচবে।লাইব্রেরীতে বসেই ইন্টারনেটের মাধ্যমে পড়ালেখা করতে পারবে। আর যে কোনো বিষয় শেখার জন্য পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ শিক্ষক যেন তাকে শেখানোর জন্য বসেই আছেন। একটু কষ্ট করে ক্লিক করলেই তিনি শেখাতে শুরু করে দিবেন। যতবার খুশি শিক্ষার্থী শিখতে চাইবে তিনি ততবার বলবেন। কখনোই বিরক্ত হবেন না এই শিক্ষক।
৮) মেধাবী দরিদ্র শিক্ষার্থীদের পড়ালেখার জন্য বিশেষ সুবিধা রাখার প্রস্তাব করছি। কারণ একজন মেধাবী মানুষ যদি শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হয়, তবে তাঁর সাথে সংশ্লিষ্ঠ অনেক মানুষই তাঁর প্রতিভার স্পর্শ থেকে বঞ্চিত হবে। একটি উদাহরণ থেকে বিষয়টি ভালোভাবে বোঝা যাবে। একজন রবীন্দ্রনাথ যদি শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত থাকতেন, তাহলে আমরা তাঁর সাহিত্যকর্ম থেকে বঞ্চিত থাকতাম। নিউটন যদি একটি দরিদ্র ঘরে জন্মগ্রহণ করতেন, তবে মাধ্যাকর্ষণ শক্তি সম্বন্ধে চিন্তা করার আগেই আপেলটি গলধকরণ করে ক্ষুধা নিবৃত্ত করতেন। স্টিফেন হকিন্স আমাদের দেশে ভিক্ষুকের ঘরে জন্মগ্রহণ করলে তাকে নিশ্চিত ভিক্ষা করতে হত। অর্থাৎ শিক্ষা থেকে একজন মানুষ বঞ্চিত হলে শুধু ঐ মানুষটিই বঞ্চিত হবে না; তার সাথে বঞ্চিত হতে পারে লাখ লাখ মানুষ। প্রতিটি জাতির মধ্যেই প্রতিভাবান মানুষ জন্মগ্রহণ করে কিন্তু সবাই এই প্রতিভাবানদের লালন করতে পারে না। যারা পারে তারাই উন্নতির চরম শিখরের দিকে এগিয়ে যায়। সুতরাং প্রতিটি দরিদ্র মেধাবীদের শিক্ষার সুযোগ করে দিলে তারাও একদিন অন্যদের জন্য সুযোগ করে দিবে।
আশার কথা হচ্ছে মানসম্পন্ন শিক্ষাব্যবস্থা চালু করার জন্য কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ইতোমধ্যেই বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। প্রতিটি শ্রেণীকক্ষে মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর ও ইন্টারনেট সংযোগ রয়েছে।আইসিটি উপকরণগুলো রক্ষণাবেক্ষণ করার জন্য একজন ট্রাবলশুটারও রয়েছে।তবে শিক্ষকদের ডিজিটাল কন্টেন্ট তৈরি করার সুযোগ করে দিতে হবে। শিক্ষার্থীদের জন্য শেখার দ্বার উম্মোচন করতে হবে।
চলবে-