জুলাই অভ্যুত্থানের শহিদদের নিয়ে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসী কর্তৃক কটাক্ষ ও ব্যাঙ্গাত্মক কন্টেন্ট বানিয়ে অপপ্রচার এবং গুপ্ত হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে জাতীয় নাগরিক কমিটি কক্সবাজারের নেতৃত্বে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
[caption id="attachment_161376" align="aligncenter" width="728"] বিজ্ঞাপন[/caption]
অদ্য ১৯ ডিসেম্বর সকাল এগারোটায় কক্সবাজার প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন জাতীয় নাগরিক কমিটির কেন্দ্রীয় সদস্য এএসএম সুজা উদ্দিন, কক্সবাজার সদর থানা প্রতিনিধি কমিটির সংগঠক ওমর ফারুক। উপস্থিত ছিলেন কক্সবাজার প্রেস ক্লাবের সভাপতি মাহবুবুর রহমান, জাতীয় নাগরিক কমিটির সদর কমিটির সংগঠক নুরুল আবছার, খালেদ, মোঃ কামরুল হাসান, নিহাল সহ অন্যান্য প্রতিনিধিবৃন্দ এবং রামু উপজেলার প্রতিনিধি জোবায়ের, সাইফুল, রিয়াদ, মঈনুর রশিদসহ অন্যান্যরা।
জাতীয় নাগরিক কমিটির পক্ষ থেকে আপনাদের সবাইকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। আমরা গভীর দুঃখ এবং ক্ষোভের সঙ্গে আজকের এই সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত হয়েছি। জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানে শহিদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করছি এবং বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী সাহসী শিক্ষার্থীদের প্রতি আমাদের সংহতি প্রকাশ করছি।
আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করেছি যে, গত পরশু কক্সবাজারের এক যুবলীগ সন্ত্রাসী জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানের মহানায়ক শহিদ আবু সাঈদকে নিয়ে ব্যাঙ্গাত্মক কন্টেন্ট প্রচার করেছে। এটি কেবল শহিদ আবু সাঈদের প্রতি অবমাননা নয়, এটি ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপ সাধনে সকল শহিদের আবেগ, অনুভূতি ও মূল্যবোধের প্রতি চরম অশ্রদ্ধা প্রদর্শনের উদাহরণ। এছাড়া, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের গুপ্তহত্যা ও হুমকি প্রদানের ঘটনাগুলো সমাজে আতংক ও উদ্বেগ তৈরি করছে। আপনারা ইতোমধ্যে অবগত হয়েছেন যে, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশগ্রহনকারী সাহসী যোদ্ধা ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের মুনতাকিম আলিফ, ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের তাজবির হোসেন শিহান, এআইইউবির ওয়াজেদ আলম সীমান্ত এবং চট্টগ্রামের জসিম গুপ্তহত্যার শিকার হয়েছে। আমরা অত্যন্ত উদ্বেগের সাথে দেখছি যে, ফ্যাসিস্ট হাসিনার দোসর গণহত্যাকারী আওয়ামীলীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, কৃষকলীগ এবং তাদের উচ্ছিস্টভোগীরা এখনো দেশে এবং বিদেশে দেশবিরোধী তৎপরতায় লিপ্ত আছে। সাম্প্রতিক ঘটনার প্রেক্ষিতে ফ্যাসিবাদের উচ্ছিষ্টভোগীদের দ্বারা ছাত্রহত্যার নির্দেশ এবং নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগ কর্তৃক অভ্যুত্থানের শক্তি তরুণদের রক্ত চেয়ে বিবৃতি চোরাগুপ্তা হামলার সাথে তাদের সংশ্লিষ্টতাকেই ইঙ্গিত করে। আমরা আইনশৃংখলা বাহিনীকে স্পেশাল ফোর্স গঠন করে এসব ঘটনার সাথে জড়িত সিলেক্টিভ কিলারদের গ্রেফতারপূর্বক দৃষ্টন্তমূলক শাস্ত্রি নিশ্চিত করার আহবান জানাচ্ছি এবং কক্সবাজারসহ দেশের সামগ্রিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিম্নোক্ত করণীয়/পদক্ষেপসমূহ গ্রহনের দাবি পেশ করছিঃ
১। সকল জেলা, উপজেলায় আওয়ামীলীগ ও তার সহযোগী সংগঠনের নেতাদের কালো টাকার অনুসন্ধান এবং সংশ্লিষ্ট ব্যাংক হিসাব জব্দ করে ফ্যাসিজমের পুণরুত্থানের হুমকি থেকে জনগণকে রক্ষা করতে হবে।
২। আইনশৃংখলা বাহিনীর যে সব সদস্য জনগণের জানমালের নিরাপত্তা বিধানে ব্যর্থতার পরিচয় তথা অন্তর্বর্তী সরকারকে ব্যর্থ ও অকার্যকর বলে প্রতীয়মান করবে তাদেরকে অপসারণ করে নতুন লোকবল নিয়োগের মাধ্যমে বাহিনীগুলো পুনর্গঠন করতে হবে।
৩। কক্সবাজারসহ সারাদেশে জুলাই-আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গণহত্যাকারী আওয়ামী সন্ত্রাসীদের অবিলম্বে গ্রেফতার করতে হবে।
৪। প্রশাসনে ঘাপটি মেরে থাকা ফ্যাসিস্ট সমর্থক আমলাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহন করে মুক্ত নাগরিক সেবা নিশ্চিত করতে হবে।
৫। ইউনিয়ন পরিষদে ফ্যাসিস্ট আওয়ামীলীগের যে সব জনপ্রতিনিধি দীর্ঘদিন ধরে অনুপস্থিত তাদেরকে অবিলম্বে অপসারণ করে দ্রুত প্রশাসক নিয়োগ দিয়ে জনভোগান্তি দূর করে নাগরিক সেবা প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে হবে।
৬। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাথে সংশ্লিষ্ট সকলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে একটি বিশেষ সুরক্ষা পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে।
আমরা দেশের সকল বিবেকবান নাগরিক, মানবাধিকার সংগঠন এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আমাদের এই দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়ে এগিয়ে আসার আহ্বান জানাই। আপনাদের মাধ্যমে আমরা সাধারণ জনগণের কাছে আমাদের বার্তা পৌঁছে দিতে চাই। ফ্যসিবাদের মুলোৎপাটনে করে সংহতি, প্রতিরোধ ও পুনর্গঠনের মাধ্যমে আমরা একটা ন্যায় ভিত্তিক বহুত্ববাদী সমাজ নির্মাণ করবো ইনশা আল্লাহ।
ডেক্স/সম্পাদক /১৯-১২-২০২৪