র্যাব -১৫ এর টেকনাফের হোয়াইক্যং ক্যাম্প গত আড়াই বছরের ৪৫ লাখ ৯২ হাজার ৩ শত ৭৮ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট, ৩৬ কেজি ২৫ গ্রাম ক্রিস্টাল মেথ আইস, বিয়ার,৬৩৭ক্যান, দেশী-বিদেশী ৭৬ টি অস্ত্র, ১২৮ পিস বুলেট,৩৬ পিস ফেন্সিডিল,মদ ৩৯৩.৭ লিটার,বিয়ার,১৯২.৪৯ লিটার সহ এ ঘটনায় জড়িত ৫৬৭ জনকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেন সিপিসি-২ র্যাব টেকনাফের হোয়াইক্যং ক্যাম্প কমান্ডার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হাফিজুর রহমান।
দেশের দক্ষিণের সীমান্ত জেলা কক্সবাজার। আর তারই দুই উপজেলা উখিয়া-টেকনাফের সীমান্তবর্তী ১৯টি পয়েন্টে সক্রিয় মাদক ও অস্ত্র চোরাকারবারিরা। বিভিন্ন সময় আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাকি দিয়ে মাদক ও অস্ত্রের চালান প্রবেশ করলেও বেশীর ভাগ আটকা পড়েন র্যার-১৫ এর হাতে। ফলে মাদক, অস্ত্রসহ নানা চোরাকারবারিদের আতঙ্কের নাম এখন র্যাব। এলিট ফোর্স র্যাব ১৫ এর কমান্ডের অফিসার লে: কর্নেল এইচ এম সাজ্জাদ হোসেনের নেতৃত্বে অত্যন্ত দক্ষতার সাথে কক্সবাজার ও বান্দরবান জেলায় নিজেদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে র্যাব সদস্যরা মানবপাচার, অপহরণ, অস্ত্রের চালান ও মাদক পাচারের ঢল ঠেকিয়ে যাচ্ছেন। এরপরও মাদককারবারী ও শীর্ষ অপরাধীরা এবং চোরাকারবারিরা থেমে নেই। র্যাব-১৫ এর চোখকে ফাঁকি দিয়ে নিজেদের অপরাধ কর্মকান্ড চালিয়ে নিতে মরিয়া অস্ত্র ও মাদক চোরাকারবারিরা।
দেশে স্বৈরাচার বিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন পরবর্তী সময়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যখন কিছুটা কোনঠাসা হয়ে পড়ে। তখনই সিন্ডিকেট গড়ে তোলে উখিয়া-টেকনাফের শীর্ষ মাদক ও অস্ত্র চোরাকারবারিরা। বর্তমানে মাদক কারবারী সিন্ডিকেট হঠাৎ করে প্রশাসনের বিভিন্ন কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচারে লিপ্ত হয়ে উঠেছে। তাদেন টার্গেট বর্তমানে বন্ধ থাকা উখিয়ার পালংখালী সীমান্ত থেকে টেকনাফের লেদা পর্যন্ত মাদকের রুট পূনরায় সচল করা। কারণ র্যাব ১৫ এ সীমান্ত পয়েন্টের চোরাকারবারিদের কাছে বর্তমানে আতঙ্কের নাম। র্যাবকে ফাঁকি দেওয়া বা কোনঠাসা করতে পারলেই যেন স্থানীয় মাদক কারবারিদের মুক্তি মিলবে। সহজেই আনা নেওয়া যাবে পাশ্ববর্তী দেশ মিয়ানমারে উৎপাদিত মরণ নেশা ইয়াবার বড় বড় চালান।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কক্সবাজারের স্থানীয় কয়েকজন প্রতিনিধিদের মতে, মাদক-অস্ত্রবাজি ঠেকাতে প্রশাসনের সহায়তায় তারা নিজেরাও কাজ করছে। কোনো মাদক কারবারি মাথাছাড়া দিয়ে ওঠার আগেই তাকে থামানোর পরামর্শ তাদের। সেক্ষেত্রে র্যাব ১৫ এর চৌকস কর্মকর্তাদের ভূমিকা খুবই প্রয়োজন।
র্যাব-১৫-এর টেকনাফ সিপিসি-২ হোয়াইক্যং ক্যাম্পের তথ্যমতে তারা অভিযানে চালিয়ে উদ্ধার করেছে ২০২২ সালে ১০,২১০৫০ ইয়াবা, যার আনুমানিক বাজারমূল্য ৩০,৬৩,১৫০০০ টাকা। এ ছাড়া ওই বছর ৪৯৫ গ্রাম ক্রিস্টাল মেথ বা আইস, ৩৩৭.৯ লিটার বিদেশি মদ, ৬৩৭ ক্যান বিয়ার, ২ টি একনলা বন্দুক, ১ টি এসএমজি, ২টি এলজি, একটি পিস্তল, ১০ রাউন্ড গুলিসহ আসামি গ্রেফতার করেন ১৬৫ জন।
২০২৩ সালে ইয়াবা আটক করেছে ২৪,০০৩৩৩ পিচ, যার আনুমানিক বাজারমূল্য ৭২,০০৯৯৯০০ টাকা। এছাড়াও ২৬ কেজি ক্রিস্টাল মেথ বা আইস যার বাজার মূল্য ১৩০০ কোটি টাকা। ১৯২.৪৯ লিটার বিয়ার, ৩৯৩.৭ লিটার মদ, ১৬ টি এলজি, ৪টি বিদেশি পিস্তল, ১টি শর্টগান, ১০টি একনলা বন্ধুকসহ আসামি গ্রেফতার করেন ২৫৭ জন।
২০২৪ সালের চলতি মাস পর্যন্ত ইয়াবা উদ্ধার করেছে ১১,৭০,৯৯৫ পিস, যার মূল্য ৩৫,১২৯৮৫০০ টাকা। ৯. ৫৩০ গ্রাম আইস যার মূল্য ৪৭৬৫০০০০০ টাকা। এছাড়া- ৪০টি অস্ত্র, ১১৮ রাউন্ড বুলেট, ৩৬ বোতল ফেন্সিডিলসহ আসামি গ্রেফতার করেন ১৪৫ জন।
র্যার-১৫ এর অধিনায়ক এইচ এম সাজ্জাদ হোসেনের নির্দেশনা ও পরিকল্পনায় এই সব সফল অভিযান পরিচালনা করেন র্যাব-১৫-এর টেকনাফ সিপিসি-২ হোয়াইক্যং ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার অ্যাডিশনাল এসপি মো. হাফিজুর রহমান।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, রোহিঙ্গা ক্যাম্পকেন্দ্রিক অপহরণ, স্বর্ণ চোরাকারবার এবং ইয়াবা সিন্ডিকেটের কাছে আতঙ্কের নাম র্যার ১৫ এর অধিনায়ক লে কর্নেল এইচএম সাজ্জাদ হোসেন ও হোয়াইক্যং ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার অ্যাডিশনাল এসপি মো. হাফিজুর রহমান। দেশের মাটিতে মাদক ঠেকাতে মরিয়া এই সাহসী কর্মকর্তাদের সরাতে বা বির্তকিত করতে এবং র্যাব-১৫ এর ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য সম্প্রতি কোটি টাকার মিশন নিয়ে নেমেছেন একটি বিশাল শক্তিশালী মাফিয়া সিন্ডিকেটের সদস্যরা। এ সিন্ডিকেটে মাদকসহ দুই ডজন মামলার আসামিও রয়েছে। র্যাবের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন এবং মাদক বিরোধী অভিযানে চৌকস কর্মকর্তাদের অনিহা সৃষ্টি করার জন্য তাদের এই আয়োজন। এতে মাদককারবারীরা স্থানীয় কিছু জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতা ও গণমাধ্যমকে ব্যবহার করছে সিন্ডিকেটটি।
অনুসন্ধ্যানে জানা যায়- কক্সবাজার র্যাব-১৫, সিপিসি-২ হোয়াইক্যং ক্যাম্পের অভিযানিক দল গোপন সংবাদের ভিত্তিতে খারাংখালী এলাকার মাদক সিন্ডিকেটের প্রধান একাধিক মামলার আসামী জনৈক শামসুল আলমকে আটক করে, তার পূর্ব মহেশখালী পাড়ার বাড়িতে অভিযান পরিচালনা করার সময় ২০০-৩০০ দুর্বৃত্ত একত্রিত হয়ে র্যাবের উপর হামলা করে। এসময় র্যাবের ৩টি গাড়ি ভাংচুর করে ও র্যাব সদস্যদের আহত করে। যারা স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
এবিষয়ে জানতে চাইলে টেকনাফ নাগরিক আন্দোলনের সভাপতি নুরুল আলম বলেন- মাদক ও রোহিঙ্গা ক্যাম্প কেন্দ্রিক সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলো এখন মিলেমিশে একাকার। তাদের জন্য বড় বাধা র্যাব-১৫ এর অধিনায়ক সহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চৌকস ও দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা।
হোয়াইক্যংয়ের বাসিন্দা নাছির উদ্দিন বলেন- এ্যাডিশনাল এসপি হাফিজ আমার দেখা একজন দক্ষ ও চৌকস পুলিশ কর্মকর্তা। তিনি দায়িত্ব নেবার পর এলাকায় অনেকটা কমেছে মাদক চোরাচালান। সব সময় আতংকে থাকেন চোরাকারবারি সিন্ডিকেট সদস্যরা। এছাড়া ডাকাতদের একাধিক আস্তানা সফলভাবে গুড়িয়ে দিয়েছেন তিনি। তাতে কমেছে ডাকাতিও।
উখিয়ার পালংখালী এলাকার সমাজপতি মিজানুর রহমান বলেন- মুক্তিপণ আদায়, রোহিঙ্গা ক্যাম্প কেন্দ্রিক অপহরণ, স্বর্ণ চোরাকারবার, ইয়াবা কারবারিদের সমন্বয়ে গড়ে উঠেছে একটি বড় সিন্ডিকেট। তাদের পৃষ্ঠপোষকতায় দায়িত্বশীল আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও দক্ষ অফিসারদের ব্যাপারে অপপ্রচার চলছে। এটি ঠেকাতে হবে। না হয় আবারও মাদকে সয়লাব হবে দেশ।
র্যাবের অভিযান সম্পর্কে স্থানীয় আবুল হাসেম সওদাগর বলেন, এ অঞ্চলে র্যাব সদস্যরা মাদক ও অস্ত্র ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে সফল অভিযান পরিচালনা করেছে। এসব অভিযানে র্যাব বিপুল পরিমাণ মাদক ও অস্ত্র উদ্ধারের পাশাপাশি এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করছেন।
তিনি আরও বলেন, মাদক কারবারি সিন্ডিকেট উখিয়া- টেকনাফের মাদক ব্যবসা আরও বাড়াতে র্যাবের ভাবমূর্তি প্রশ্নবিদ্ধ ও তাদের কোণঠাসা করতে র্যাব অভিযানে গেলে তাদের ওপর হামলা ও নানান অপপ্রচারে লিপ্ত বলে শোনা যাচ্ছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে র্যাব-১৫-এর টেকনাফ সিপিসি-২ হোয়াইক্যং ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. হাফিজুর রহমান বলেন, ‘গত দুই বছরের অধিক সময়ে দায়িত্ব নেবার পর থেকে সরকারের দেয়া মতে অস্ত্র ও মাদকের বিরুদ্ধে জিরোটলারেন্স নীতি অনুসরণ করে কাজ করছি। টেকনাফ-উখিয়ায় বিভিন্ন পাহাড়ে অনেক অভিযান চালিয়ে অপহরণকারি, মাদক ও অস্ত্র কারবারিদের এবং রোহিঙ্গা শীর্ষ সন্ত্রাসীদের আটক করেছি, তাই আমার শত্রু থাকতে পারে এটি স্বাভাবিক। কে কি ভাবলো, কে কি বলছে তা আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ নয়। আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ হল, আমি যতদিন দায়িত্বে আছি ততদিন সরকার ও আমার বাহিনী প্রধানের নির্দেশনা অনুযায়ী অপহরণকারি, মাদক ও অস্ত্র কারবারিদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম ও অভিযান চালিয়ে যাবো।’
র্যাব-১৫ এর বর্তমান সিও মহোদয় মাদক পাচাররোধ ও অবৈধ অস্ত্রধারীদের দমনের ব্যাপারে অন্তত কঠোর। তাঁর নেতৃত্বে র্যাব-১৫ সারাদেশে আলোচিত ও সুনামধন্য একটি অপরিহার্য চৌকস বাহিনীতে পরিনত হয়েছে।সেজন্য মিলেছে পুরস্কারও।