শুভ নববর্ষ ১৪২৪ সন। আমরা বাঙালি। আজ বরন করে নেবো নতুন বছরকে। পুরনো দিনের সব কষ্ট মুছে আজ থেকে নতুনের সন্ধানে শুধুই সামনে এগুবো।
আজ বিভিন্ন স্থানে বসবে বৈশাখী মেলা, দোকানিরা পেছনের সব হিসেব মিলিয়ে খুলবেন নতুন খাতা। আমাদের এই সোনার বাংলায় প্রতি বছর পহেলা বৈশাখে এই উৎসব পালিত হয়। বাংলা একাডেমী কর্তৃক নির্ধারিত আধুনিক পঞ্জিকা অনুসারে এই দিন নির্দিষ্ট করা হয়েছে। বাংলা দিনপঞ্জির সাথে হিজরী ও খিষ্ট্রীয় সনের মৌলিক পার্থক্য হলো হিজরী সন চাঁদের হিসেবে এবং খ্রিষ্টীয় সন ঘড়ির হিসেবে চলে। হিজরী সনে নতুন বছর শুরু হয় সন্ধ্যায়, নতুন চাঁদের আগমনে। ইংরেজী নতুন বছর শুরু হয় মধ্যরাতে। আর বাংলা নতুন বছর শুরু হয় সূর্যোদয় থেকে, অবশ্য এ নিয়ে অনেকের দ্বিধাদ্বন্দ আছে। ঐতিহ্যগত ভাবে সূর্যোদয় থেকে বাংলা দিন গননার রীতি। বাংলা একাডেমী এই নিয়ম বাতিল করে আন্তর্জাতিক রীতির সাথে সামঞ্জস্য রেখে মধ্য রাত থেকে দিন গননার নিয়ম চালু করে। আজ বিভিন্ন স্থানে বসবে বেশাখী মেলা। বাঙালির জীবনে বছরে একবারই আসে এমন দিন, যা একান্তই আমাদের জাতিসত্তার অংশ। আমাদের বর্ষবরণের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হল, এটি ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবার উৎসব। তবে বর্তমানে এ উৎসব হয়ে উঠেছে কিছুটা শহরকেন্দ্রিক। অথচ গ্রামই এদেশের প্রাণ। গ্রামের মানুষ, মূলত কৃষকরাই বাংলা দিনপঞ্জি অনুসরণ করে থাকেন। বাংলা ঋতুচক্র মেনে করেন চাষাবাদ। সারা দেশে নববর্ষের আনন্দ-উদযাপন ছড়িয়ে দিতে তাই গ্রামীণ জীবনেও সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য নিশ্চিত করতে হবে। বর্ষবরণের আয়োজন তাতে হয়ে উঠবে আরও সর্বজনীন।
১৫ বছর আগে এই দিনে রাজধানী ঢাকার রমনা বটমূলে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে বোমা হামলায় প্রাণ হারায় নয়জন। আহত হয় অনেকে। পহেলা বৈশাখে রাজধানীতে নারী লাঞ্ছনার ঘটনা ও ঘটেছিলো। পহেলা বৈশাখের মতো অসম্প্রদায়িক উৎসবের প্রতি ধর্মান্ধ প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠীর রুদ্ররোষ থাকা স্বাভাবিক। আশার কথা, এই নৃশংস ঘটনা বাঙালিকে দমিয়ে রাখতে পারেনি। এখনও বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে বিপুল লোকের সমাগমই তার প্রমাণ। তবে বন্ধ হয়নি অপশক্তির তৎপরতাও। প্রতিক্রিয়াশীলরা গণতন্ত্র, প্রগতি, বাঙালি সংস্কৃতি- সবকিছুরই বিরুদ্ধে। আমাদের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে জোরদার করে প্রগতির পতাকা উর্ধ্বে তুলে ধরে, বাঙালির অসাম্প্রদায়িক চরিত্রকে আরও বিকাশ করেই অপশক্তিতে রুখে দাঁড়াতে হবে।
বাংলা নববর্ষের হাত ধরে প্রায় একই সময়ে উদযাপিত হয় আদিবাসী গোষ্ঠীর বৈসাবি, বিজু ইত্যাদি উৎসব। চৈত্রসংক্রান্তি ও পহেলা বৈশাখের নানা আয়োজন চলে বিভিন্ন পাহাড়ি গোষ্ঠির মধ্যে। বিদেশে বাংলাদেশের কিছু মিশন নববর্ষ উদযাপনের মাধ্যমে আমাদের সংস্কৃতি বহির্বিশ্বে পরিচয় করিয়ে দিতে ভূমিকা রাখছে। এ প্রয়াস আরও জোরদার হলে বাংলা নববর্ষের পরিচিতি আরও বাড়বে। আজ পহেলা বৈশাখ আপন শিল্প-সংস্কৃতির ধারাকে ঋদ্ধ ও বেগবান করার শপথ নেয়ার দিন।
আজ পর্যটন নগরী কক্সবাজারে পর্যটকদের পদ ভারে মুখরিত। প্রান পেয়েছে শহর জুড়ে। সৈকতে নানা অনুষ্ঠান, নানা আয়োজন।
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নববর্ষ উৎসবকে দেশের ঐতিহ্য হিসেবে অভিহিত করে বলেছেন, বাংলা নববর্ষ পালন ও ধর্মের মধ্যে কোনো যোগসূত্র নেই। এই উৎসব হচ্ছে আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য। বর্ষবরণের অনুষ্ঠান নিয়ে একটি মহলের পক্ষ থেকে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে, জানিয়ে দেশবাসীকে এ ব্যাপারে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
লেখক
হাসিনা আকতার রিটা::
যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক
জেলা যুব মহিলা আওয়ামীলীগ কক্সবাজার::