উখিয়া নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৩/০৯/২০২২ ২:৪৭ পিএম , আপডেট: ০৩/০৯/২০২২ ২:৪৯ পিএম

এম আর আয়াজ রবি।
উখিয়ায় সারের অভাবে আমন উৎপাদনে মারাত্মক প্রভাব পড়ার সম্ভাবন বিরাজ করছে। এমনিতে আবহাওয়া ও জলবায়ুগত কারনে এ বছরের বর্ষা মৌসুম দেরিতে শুরু হওয়ায় আমন ধানের চারা রোপনে কৃষক বা চাষীদের অনেক বেগ পেতে হয়েছে। অনেক স্থানে পানির অভাবে গ্রীস্ম মৌসুমের মত সেচের মাধ্যমে চারা রোপণ করতে বাধ্য হয়েছে। আবার অনেক পাহাড়ি ঢালের উচু ভুমি পতিত রয়ে গেছে পর্যাপ্ত বৃষ্টি বা পানির অভাবে। সাথে অনেক বীজতলাও পতিত রয়ে গেছে বলে জানা যায়। আবার সময়মত বৃষ্টির অভাবে চারা রোপণ করতে না পারার কারনে অনেক বীজতলার চারা বিনষ্ট হয়ে গেছে।

তাছাড়া করোনা, রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ, বিশ্ব বাজারে অর্থনৈতিক মন্দা, আবহাওয়া ও জলবায়ুগত প্রভাব ও অন্যান্য প্রাকৃতিক ও মানবীয় কারনে ফসল উৎপাদনে ঘাটতিসহ বিভিন্ন কারনে আগামীতে ‘দেশ ও বৈশ্বিক’ অবস্থা পর্যবেক্ষন করে, দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পুর্ন হয়ে বৈশ্বিক মন্দা মোকাবেলায় নিজের পায়ে দাঁড়ানোর জন্যেই মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা ছিল-“দেশে এক ইঞ্চি জায়গাও যাতে আবাদের বাইরে না থাকে বা পতিত না থাকে। যেখানে আবাদ হবে না সেখানে শাক সবজি, ঔষধি, ফলজ বা অন্যান্য গাছ রোপণ করে দেশের স্বয়ংসম্পুর্নতা আনায়ন করার চেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে”।

কিন্তু মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর মহৎ উদ্দ্যেশ্য পুরণের বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে যথাসময়ে আমন চাষ করতে না পারা, সাথে কৃষকের চাহিদা মতো সারের সরবরাহ না থাকায় বাজারে এমওপিসহ কিছু সারের হাহাকার অবস্থা বিরাজমান।

ভরা বর্ষা মৌসুমে-অনাবৃষ্টির কারনে অনেক কষ্টে রোপিত চারায় সঠিক সময়ে পর্যাপ্ত সার প্রয়োগ করতে না পারলে প্রত্যাশিত উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব হবেনা। অত্র প্রতিবেদক বিএসআইসি ও বিএডিসি এর নির্ধারিত বিভিন্ন ডিলার ও অন্যান্য সাব ডিলারদের তথ্য মতে বিভিন্ন এলাকার কৃষকের সংখ্যা ও চাহিদা অনুপাতে পর্যাপ্ত সার সরবরাহ করতে না পারার কারনে ডিলাররা প্রতিদিন শত শত কৃষককে তাদের প্রয়োজনীয় সার সরবরাহ করতে পারছেন না বলে অত্র প্রতিবেদককে জানান। তারা আরও যোগ করেন, বিভিন্ন উপজেলা কৃষি অফিসার কর্তৃক নির্ধারিত ডিলার ও সাব ডিলাররাই শুধু সরকারি ভর্তুকি দেওয়া সার প্রান্তিক ভোক্তাদের মাঝে বিক্রয় করতে পারেন। বর্তমানে বিশেষ করে এমওপি সারের সংকট তীব্র আকার ধারন করছে।

সারের দুষ্প্রাপ্যতা বিষয়ে ভুক্তভোগী সাধারন কৃষকের সাথে আলাপ করলে ভালুকিয়া পালং এর কৃষক জাকের বলেন, ” আমি ইউরিয়া (সাদা সার) ও ডিওপি (লাল সার) সার ক্রয় করার জন্য একটি নির্দিষ্ট ডিলারের দোকানে গেলে প্রথমে সার নাই বলে। পরে আমাকে চাহিদার তুলনায় অল্প সাদা সার প্রদান করে কিন্তু লাল সার নাই বলেন। পরে ১০ কেজি সাদা সার নিয়ে আসি যেখানে আমার ২৫ কেজি মতো চাহিদা ছিল। দু’দিন পরে দেখা করার জন্য বলেন। দামও নিলেন প্রতি কেজি ২৫ টাকা করে। মেমো চাইলে তা সরবরাহ করেন নি”।

জালিয়া পালং এলাকার কৃষক নুর নবী বলেন, ” সার বিক্রেতারা ধানের অণুপন্যসহ বিক্রয় করতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। সারের স্বল্পতার সুযোগে অণুপন্য ছাড়া শুধু সার চাইলে তারা সাধারন কৃষককে বিক্রয় করতে চায় না। নেই বলে সাব জবাব দিয়ে দেয়।”

ফলিয়া পাড়া এলাকার কৃষক আলী মিয়া জানান, ” এমনিতে বর্ষাকালে বৃষ্টি কম হওয়ায়, সঠিক সময়ে আমরা ধানের চারা রোপন করতে পারি নি, আবার বিভিন্ন প্রকার সারের বাজার স্বল্পতার কারনে যা রোপন করেছি তা ঠিকিয়ে রাখতে পারব কিনা বলতে পারছি না। বিভিন্ন এলাকায় সারের ডিলারের সংখ্যা কম হওয়ায় অনেক ডিলার দিনে দু’চারবার সারের মুল্য বৃদ্ধি করে সাধারণ চাষীদের উপর অনেকটা জুলুম করছে। সরকার প্রতিটি সারের জন্য নির্দিষ্ট মুল্য তালিকা ঘোষণা করার পরেও কৃত্রিমভাবে সারের মুল্য কেজি প্রতি অধিক মুল্য হাতিয়ে নিচ্ছে। এগুলো দেখার কেউ নেই”।

সূত্র মতে, কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলায় বিএসআইসি ডিলার রয়েছে ১০টি। সেগুলো হচ্ছেঃ মেসার্স সেলিম উল্লাহ, মেসার্স এস কে অটো রাইস মিলস, মেসার্স ছয় তারা রাইস এন্ড ফ্লোর মিলস, মেসার্স কাজল এন্ড ব্রাদার্স, মেসার্স রশিদ আহমেদ এন্ড ব্রাদার্স, মেসার্স মোঃ আলি মেম্বার, মেসার্স ফিরোজ আহমেদ, মেসার্স রফিক আহমেদ, মেসার্স নুরুল ইসলাম।
আবার বিএডিসি এর অধীনে ০৯ টি ডিলার রয়েছে। তাদের মধ্যে মেসার্স হাসান এন্টারপ্রাইজ, মেসার্স সুমাইয়া এন্টারপ্রাইজ, মেসার্স কোর্ট বাজার এন্টারপ্রাইজ, মেসার্স তাহমিনা এন্টারপ্রাইজ, এম ডি ইদ্রিস এন্টারপ্রাইজ, মেসার্স আরমান স্টোর, মেসার্স মরিচ্যা বীজ ভাণ্ডার, জাহেদ এন্ড ব্রাদার্স উল্লেখযোগ্য। তাছাড়া ইউনিয়ন ও গ্রাম পর্যায়ে আরও ৪১ টি সাব ডিলার রয়েছে বলে সূত্রে জানা যায়।

উখিয়া সদর, কোট বাজার, মরিচ্যা এলাকায় অবস্থিত বিভিন্ন ডিলারের সাথে আলাপ কালে অত্র প্রতিবেদককে তারা বলেন, ” আমরা চাহিদামত ‘পে অর্ডার’ করার পর ও সার সরবরাহকারী কর্তৃপক্ষ প্রত্যাশিত এমওপি সরবরাহ করতে না পারার কারনে প্রতিদিন শত শত কৃষককে বর্তমানে অতি দুর্লভ এমওপি সার সরবরাহ করতে পারছি না।” তারা আরও জানান, এটি ছাড়াও অন্যান্য সার যেমনঃ ইউরিয়া, টিএসপি, ডিএপি এর ও সরবরাহ কম হওয়ায় কৃষকদের পরিমান মতো সেগুলোও সঠিক সময়ে সরবরাহ করতে পারিনি।”

উখিয়ায় নিযুক্ত বিএসআইসি এর ডিলার এস কে অটো রাইস মিল এর স্বর্তাধিকারী আহমেদ কবির জানান, “জুলাই মাস থেকে আমরা কৃষকের চাহিদা মত বিভিন্ন সারের যোগান দিতে পারছিনা। প্রায় প্রতিদিন ১৫০ থেকে ২০০ কৃষককে তাদের প্রত্যাশিত সার সরবরাহ করতে পারছিনা। কৃষকরা অনেক সময় আমাদের উপর রাগ করে থাকে। অনেকেই মনে করে তেলসহ অন্যান্য নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য সামগ্রির মুল্য বৃদ্ধির সুবাধে সারের মুল্য বৃদ্ধি পাবে এ আশায় আমরা গুদামজাত করে রেখেছি। প্রান্তিক কৃষকদের বুঝাতেই পারছিনা আমাদের প্রত্যাশিত চাহিদা মোতাবেক উপজেলা প্রশাসন ও যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে পর্যাপ্ত সার না পাবার কারনে তাদেরকে সার সরবরাহ করতে পারছিনা”।

“চলমান আর্থিক বছর, গেল জুলাই মাস থেকে শুরু হল কেবল। কিন্তু জুলাই মাসেই আমাদের চাহিদা পত্রের বিপরীতে কর্তৃপক্ষ সারের সরবরাহ নিশ্চিত করতে পারিনি” তিনি যোগ করে বলেন।

কক্সবাজার ফার্টিলাইজার এসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি ও মেসার্স রফিক আহমদ মিলস এর স্বত্বাধিকারী জনাব রফিক আহমেদ অত্র প্রতিবেদককে জানান, ” সারের সংকট কথাটি সত্য নয়। এটি সাময়িক অসুবিধা। এই বর্ষা মৌসুমে কৃষকরা জমিতে সারের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতে পেরেছেন। কিন্তু চাহিদা ও যোগানের সাময়িক অসুবিধা ছিল। বিশেষ করে এমওপি সারের একটু দুষ্প্রাপ্যতা রয়েছে। কিন্তু অন্যান্য সার বাজারে পাওয়া যাচ্ছে।” তিনি আরও যোগ করেন, ” আমার জানা মতে সারের শীপ চট্টগ্রাম বন্দরে ভীড়ছে। আগামী দু চার দিনের মধ্যে আমাদের প্রত্যাশিত এমওপি সার আমরা হাতে পাব আশা করছি। অধিকন্তু এমওপি সার মাঠে প্রয়োগের সময় আরও সপ্তাহ দুয়েক বাকি আছে। তাই এরিই মধ্যে আমরা তা হাতের নাগালে পাব বলে আশা করছি।”

তিনি ডিলারের প্রাপ্ত কমিশনের ব্যাপারে সরকারের কাছে আবেদন জানিয়ে বলেন, ” প্রায় তিন দশক হচ্ছে ডিলারের কমিশন অপরিবর্তিত। বর্তমান আর্থ সামাজিক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে কমিশনের পরিমান বাড়ানো উচিত। কারন ইতিমধ্যে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের মুল্য, পরিবহন খরচ, রক্ষণাবেক্ষন খরচ, অন্যান্য আনুষঙ্গিক খরচ বেড়ে গেলেও কমিশনের কোন পরিবর্তন হয়নি গত অনেক শুভ নেক বছর যাবৎ। তাই এ ব্যাপারে সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে দৃষ্টি দেবার আহবান জানাচ্ছি।”।

অত্র প্রতিবেদক সারের স্বল্প সরবরাহের ব্যাপারে উখিয়া উপজেলা কৃষি অফিসার জনাব প্রসেনজিত তালুকদার এর সাথে আলাপকালে তিনি বলেন, ” ২০২২-২০২৩ অর্থ বছরে উপজেলায় মাসওয়ারি বিভিন্ন রাসায়নিক সারের চাহিদাপত্র আমরা উপ-পরিচালক, কৃষি সম্প্রসারন অধিদফতর, কক্সবাজার সমীপে যথানিয়মে পেশ করলে-গত জুলাই’২২ সালের চাহিদা পত্রে ইউরিয়া ২০০ মেঃটন, টিএসপি ৪৬১ মেঃ টন, ডিএপি ২০০ মেঃ টন, এমওপি ৫৩০ মেঃটন চাহিদা ছিল কিন্তু উক্ত চাহিদার বিপরীতে উখিয়া উপজেলা প্রশাসন যথাক্রমে ইউরিয়া ১২৬ মেঃটন, টিএসপি ৬৬ মেঃ টন, ডিএপি ৯৪ মেঃ টন এবং এমওপি ৭৬ মেঃটন বরাদ্দ পায়-যা চাহিদা এবং প্রাপ্তির মধ্যে অনেক গ্যাপ রয়ে যায়। সেই স্বল্প প্রাপ্ত সারগুলো বিভিন্ন ডিলারের মধ্যে বিলি বন্টন করতে আমাদের হিমশিম খেতে হয়। তথাপি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে আমরা সাধারন কৃষকের চাহিদা মেটানোর চেষ্টা করেছি ও চেষ্টা করে যাচ্ছি”।

তিনি আরও যোগ করেন, “প্রান্তিক কৃষকরা জমিতে বিঘা প্রতি বা কানি প্রতি কতটুকু সার প্রয়োগ করতে হয় তা সঠিক মাত্রা জানেন না। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তারা প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত সার প্রয়োগ করে থাকেন, যা অনেকক্ষেত্রে হিতে বিপরীত হয়ে ফলন কমে যায় আবার তাদের বিঘা প্রতি বা কানি প্রতি উৎপাদন ব্যয়ও বেড়ে যায় অধিকন্তু তারা বাজার থেকে উৎপাদন খরচ ও তাদের পরিশ্রম বাবদ লাভের মুখ তো দেখেনই না, অনেকক্ষেত্রে লোকসান গুনতে হয়। তাই বর্তমান কৃষিবান্ধব সরকার কৃষকদের উৎপাদন খরচ কমিয়েও উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ঠিক রাখার পন্থা শিখিয়ে দেবার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।এজন্য উপজেলা কৃষি বিভাগের মাধ্যমে বিভিন্ন ট্রেইনিং, ওয়ার্কশপ ও সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে পরিমিত সার ব্যবহারের আওতায় আনার আপ্রান চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে আমাদের কৃষি বান্ধব সরকার”।

বিএডিসি-এর কক্সবাজারের দায়িত্বে থাকা সহকারী পরিচালক ইকবাল বাহারের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলেতিনি বলেন, এমওপি সার কক্সবাজারে সব উপজেলার জন্য ৪৬৫ মেঃ টন ইতিমধ্যে ডিস্ট্রিবিউশন করা হয়েছে, আরও ছাড় দেবার অপেক্ষায় আছে। ” অত্র প্রতিবেদক গত জুলাই মাসে উখিয়া উপজেলার চাহিদাপত্র ছিল ৪৬১ মেঃ টন তাহলে কক্সবাজার জেলার ৯ টি উপজেলার চাহিদা পুরণ কেমনে করবে? তার উত্তরে তিনি বলেন, আমার উর্ধ্বতন মহল আমাকে যত ডিসবার্সেড করতে বকেছেন আমি ঠিক ততই করেছি, এখানে আমারব্দায়িত্ব আনি পালন করেছি। উপজেলা থেকে অতিরিক্ত চাহিদাপত্র দিলে আমার করার কিছু নেই বলে তিনি জানান।”

এদিকে কৃষি মন্ত্রনালয়ের বরাতে জানা যায়, রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ, বিশ্ব অর্থনীতির বলেন রুপ বস্থা, সারের কাঁচামালের মুল্য বৃদ্ধি, উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি, পরিবেশ হন ব্যয় বৃদ্ধিসহ বলেন ভিন্ন কারনে এ বছর দেশে সারের ভর্তুকিতে লাগবে প্রায় ২৮ হাজার কোটি টাকা-যা গতবছরের তুলনায় প্রায় চার গুণ। ইতিমধ্যে ১৯ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি প্রদান করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক।

মন্ত্রী আরো বলেন, “কোভিড-১৯ পরিস্থিতির প্রভাবে বিশ্বব্যাপী সারের মূল্য অস্বাভাবিক পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছে যা গতবছরের তুলনায় প্রায় তিন গুণ। তাছাড়া জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় জাহাজ ভাড়াও প্রায় দুই গুণের বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২০-২১ অর্থবছরে প্রতি কেজি সারের আমদানি ব্যয় ছিল ইউরিয়া ৩২ টাকা, টিএসপি ৩৩ টাকা, এমওপি ২৩ টাকা, ডিএপি ৩৭ টাকা, যা ২০২১-২২ অর্থবছর বেড়ে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ৯৬ টাকা, ৭০ টাকা, ৫৪ টাকা এবং ৯৩ টাকা। অথচ প্রতি কেজি সার কৃষককে দেওয়া হচ্ছে ইউরিয়া ১৬ টাকা থেকে ৬ টাকা বাড়িয়ে ২২ টাকায়, টিএসপি ২২ টাকায়, এমওপি ১৫ টাকায়, ডিএপি ১৬ টাকায়।”
তিনি আরও যোগকরে বলেন, “এর ফলে বর্তমানে ভর্তুকি দাঁড়িয়েছে প্রতি কেজি ইউরিয়া ৫৯ টাকা, টিএসপি ৫০ টাকা, এমওপি ৪১ টাকা এবং ডিএপিতে ৭৯ টাকা। এ বিশাল অংকের ভর্তুকি প্রদানে চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে লাগবে ২৮ হাজার কোটি টাকা। বিগত ২০২০-২১ অর্থবছরে ভর্তুকিতে লেগেছিল ০৭ হাজার ৭১৭ কোটি টাকা। এ বছর ভর্তুকি খাতে বাজেট মাত্র ০৯ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। আরো প্রায় ১৯ হাজার কোটি টাকা অতিরিক্ত প্রয়োজন”।

১ আগস্ট থেকে ইউরিয়া সারের কেজিতে ছয় টাকা বাড়তি দাম কার্যকর হয়েছে। এখন প্রতি কেজির দাম খুচরা পর্যায়ে ২২ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। আগে ছিল ১৬ টাকা। ডিলার পর্যায়ে আগে দাম ছিলো ১৪ টাকা। এখন হয়েছে ২০ টাকা।

কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে যে, বাংলাদেশে সব রকমের সারের পর্যাপ্ত মজুত রয়েছে। আমন মৌসুমে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত দেশে ইউরিয়া সারের চাহিদা ছয় লাখ ১৯ হাজার মেট্রিক টন। বর্তমানে ইউরিয়া মজুত আছে সাত লাখ ২৭ হাজার মেট্রিক টন। অন্যান্য সারের মধ্যে টিএসপির আমন মৌসুমে চাহিদা এক লাখ ১৯ হাজার টন। মজুত আছে তিন লাখ ৯ হাজার টন। ডিএপির চাহিদা দুই লাখ ২৫ হাজার টন। মজুত আছে ছয় লাখ ৩৪ হাজার টন। এমওপির চাহিদা এক লাখ ৩৭ হাজার টন। মজুত আছে দুই লাখ ১০ হাজার টন।
কৃষি মন্ত্রণালয় বলছে,”কৃষকেরা আসলে না বুঝতে পেরে ইউরিয়া সার বেশি ব্যবহার করছে। ডিএপির মধ্যেই ইউরিয়া সার আছে। দাম বাড়ার কারণে ইউরিয়ার ব্যবহার কমবে। কিন্তু উৎপাদন ব্যাহত হবে না।”

কৃষকরা বলছেন ডিজেলের দাম আগেই বেড়েছে। এখন সারের বাজারে যে নৈরাজ্য শুরু হয়েছে তাদের ধান চাষ করা অনেক কঠিন হয়ে পড়বে। আর কৃষি উৎপাদন গবেষকেরা বলছেন, এর কারনে ধানের উৎপাদন কমে গিয়ে চালের আমদানি বাড়বে। আর কৃষকও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। পানির অভাবে আমন চাষ বিলম্বিত হওয়ায়, রবি শস্যের উপরও মারাত্মক প্রভাব পড়বে, দেশ নীরব দূর্ভিক্ষের দিকে এগুবে- আমাদের জন্য মারাত্মক অশনিসংকেত।

পাঠকের মতামত

নাইক্ষংছড়িতে নাশকতার অভিযোগে মামলা,আটক -৩, এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে ৬৫ জন

বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়িতে নাশকতার অভিযোগে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ ৬৮ জনের বিরুদ্ধে নাশকতা ...