আন্তর্জাতিক সংস্থা সেভ দ্য চিলড্রেন গত ১৮ অক্টোবর কক্সবাজারের একটি স্থানীয় হোটেলে “মানসিক স্বাস্থ্য একটি সার্বজনীন মানবাধিকার”-এই শ্লোগানকে সামনে রেখে “বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস ২০২৩” উদযাপন করেছে। অনুষ্ঠানে কক্সবাজারের স্বাস্থ্যখাতের সরকারী কর্মকর্তা, আন্তর্জাতিক এবং জাতীয় সংস্থ্যার প্রতিনিধি, এবং মানসিক স্বাস্থ্য পেশাজীবীসহ অন্যন্যরা উপস্থিত ছিলেন এবং আলোচনায় অংশগ্রহণ করেছেন।
মানসিক স্বাস্থ্যসেবা এবং সব মিলিয়ে ভালো থাকার বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি, সমাজে যে সকল ভ্রান্ত ধারণা প্রচলন বা চর্চা রয়েছে, তা দূর করার লক্ষ্যে সকলের অংশগ্রহনে একটি আলোচনা পরিচালনা করাও এই অনুষ্ঠানটির অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল। আলোচনায় উঠে এসেছে যে, সমস্যাটি অনেক ক্ষেত্রে প্রতিরোধযোগ্য এবং সময়মতো ও যথাযথ চিকিৎসা পেলে মানসিক রোগীরাও ভাল থাকতে পারেন। এছাড়া এ খাতে দেশে চাহিদার তুলনায় পেশাজীবীর সংখ্যা যে অপ্রতুল সে বিষয়টিও আলোচিত হয়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে কক্সবাজারের প্রতিনিধি সাইকিয়াট্রিস্ট ডা. শাহরিয়ার, এসিসট্যান্ট প্রফেসর অনুষ্ঠানের প্রতিপাদ্য বিষয়কে লক্ষ্য রেখে বাংলাদেশের মানসিক স্বাস্থ্য সেবা নিয়ে একটি উপস্থাপনা করেন। এরপর মানসিক স্বাস্থ্য এবং মনো-সামাজিক সেবা ওয়ার্কি গ্রুপের কো-চেয়ার, ইউ এন এইচ সি আর এবং আই ও এম-এর মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক প্রতিনিধিদ্বয় উপস্থাপন করেন স্থানীয় বাংলাদেশী এবং বাংলাদেশে বসবাসরত বাস্তুচ্যুত রোহিংগা জনগোষ্ঠীর মাঝে মানসিক স্বাস্থ্যসেবা নেওয়ার চাহিদা কি পরিমান, কি কি সেবা দেওয়া হয় এবং কি কি করণীয় হতে পারে।
এছাড়াও স্বাস্থ্য, পুষ্টি, লিংগভিত্তিক সহিংসতা, শিক্ষা, খাদ্য নিরাপত্তা এবং পার্টনারশীপ নিয়ে কাজ করছেন এমন পেশাজীবীরা তাদের কাজের মধ্য দিয়ে কেন মানসিক স্বাস্থ্য এবং মনো-সামাজিক সেবা সকলের জন্য সহজ প্রাপ্তি করা প্রয়োজন তার উপর বিশেষ আলোকপাত করেন। অনুষ্ঠানে মৌলিক এবং ন্যূনতম মানসিক স্বাস্থ্যসেবা হিসেবে “মনের প্রাথমিক সেবা” এবং অন্যান্য সহায়তা প্রদানের কৌশলসমূহের উপকারিতা নিয়ে অভিজ্ঞতা বিনিময় করা হয়।
কক্সবাজার ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেলা হাসপাতালের সুপারিনডেন্ট ডা. টিয়াং মং নিও, সিভিল সার্জন অফিসের প্রতিনিধি ডা. রাইদা হক, শরণার্থী, ত্রাণ এবং প্রত্যাবসান কমিশন এর স্বাস্থ্য সমন্বয়কারী ডা. তোহা এস আর এইচ ভূইয়া এবং সহকারী সমস্বয়কারী ডা. মোহাম্মদ সারোয়ার জাহান এবং টেকনাফ স্বাস্থ্য এবং পরিবার পরিকল্পনা অফিসার ডা. মোহাম্মদ আবুল কাশেম-এ অনূষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। তাঁরা সমন্বিত মানসিক স্বাস্থ্য সেবাগুলো সপ্রদানের উপর আলোকপাত করেন এবং প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আলোচনা করেন। স্বাস্থ্যসেবা পেশাজীবীদের মধ্যে বার্ণ আউট হয়ে যাওয়ার প্রবণতা অনেক বেশী এবং তাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য সেবার ব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করেন। জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক-উভয় পর্যায়ে বেসকরকারী সংস্থার সমন্বিত সেবা কার্যক্রম, এ্যাডভোকসী এবং সমন্বয়ের গুরুত্বের উপর জোর দিয়েছেন। অনুষ্ঠানটির সঞ্চালনায় ছিলেন সেভ দ্য চিলড্রেন-এর মানসিক স্বাস্থ্য এবং মনো-সামাজিক সেবা এডভাইজর রুমা খোন্দকার, ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট এবং সংগঠক হিসেবে ডা. আবদুল্লাহ আল নোমান (সিনিয়র ম্যানেজার), হুমায়ুন কবীর, ফারহানা মাহবুব, ও ডা. আরাফাত হোসেন।
সেভ দ্য চিলড্রেন সার্বজনীন মানসিক স্বাস্থ্যের পক্ষে কাজ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং সকলের কাছে মানসিক স্বাস্থ্যসেবা পৌছে দেবার পাশাপাশি ভ্রান্ত ধারণা দূর করার জন্য কাজ করে যাচ্ছে।