"নীরব ঘাতক শব্দ দূষণ
করছে রিক্ত নিচ্ছে ভূষণ
পরিবর্তিত হচ্ছে জলবায়ু
ঘাতক নিচ্ছে কেড়ে আয়ু"
(বিধান চন্দ্র রায়)
উখিয়া উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ স্টেশন গুলোর রাস্তায় নামলে মাঝে মাঝে মনে হয় গাড়ি চালকেরা যেন হর্ণ বাজানোর প্রতিযোগিতায় নেমেছেন। কোন কিছু সামনে পড়ে গেলেই কানফাটা শব্দে বেজে উঠছে হর্ণ। এক সেকেন্ডও যেন অপেক্ষা করতে রাজি নন চালকেরা। বিশেষজ্ঞ ডাক্তাদের মতে,আমাদের কানের ভেতরে রিসেপ্টর প্রথমে শব্দ তরঙ্গকে ধারণ করে, তারপর ককলিয়ার নার্ভের মাধ্যমে আমাদের মস্তিষ্কে পাঠায়। দীর্ঘদিন অতিরিক্ত শব্দ এই রিসেপ্টরকে ক্ষতিগ্রস্ত করে যাচ্ছে। ক্রমাগত আমরা শব্দের মধ্যে থাকতেছি,যার ফলে আমরা ধীরে ধীরে শ্রবণশক্তি হারাচ্ছি। যা আমরা টেরও পায় না যে আমরা ধীরে ধীরে কানে কম শুনতেছি।
বিজ্ঞানের তথ্য মতে, একজন মানুষ সাধারণত ৪০ ডেসিবল শব্দে কথা বলে। যাকে বলা হয় বাড়ির ভেতরের শব্দ।
চিকিৎসকদের মতে "আমাদের চারপাশে পরিবেশে যদি উচ্চমাত্রার শব্দ থাকে এবং এমন পরিবেশে অনেক সময় কাটলে অতিরিক্ত অ্যাড্রেনালিন হরমোনের ক্ষরণ হতে থাকে।
তাতে হাইপারটেনশন হবে, প্রেশার বাড়বে আর হাইপারটেনশন, প্রেশার বেশি থাকলেই হৃদরোগের ঝুঁকি অবশ্যই বাড়বে।আমাদের কান শব্দকে গ্রহণ করে কিন্তু তার তরঙ্গ শেষ পর্যন্ত মস্তিষ্কে পৌছায় স্নায়ুর মাধ্যমে। মস্তিষ্কে কানের জন্য নির্ধারিত অংশ আছে। সেই অংশটির মাধ্যমেই আসলে আমাদের শ্রবণ প্রক্রিয়া কাজ করে এবং আমরা শুনতে পায়।শব্দ উচ্চ রক্তচাপ তৈরি করে আর মস্তিষ্কে স্ট্রোকের সবচেয়ে বড় কারণই হল উচ্চ রক্তচাপ।আমরা প্রতিনিয়ত জীবনে অনেক চাপের মধ্যে দিয়ে যায়। সেটি মোকাবেলার একটা ক্ষমতাও তার থাকে। কিন্তু সেজন্য সুস্থ পরিবেশ প্রয়োজন। কিন্তু চারপাশের পরিবেশে যদি অসহনীয় কিছু থাকে যেমন অনেক উচ্চ শব্দ যখন মনে প্রতিনিয়ত বিরক্তির উদ্রেক , রাগ, চাপা উত্তেজনা তৈরি করে।
আমাদের উখিয়া,কোটবাজার,মরিচ্যা,কুতুপালং স্টেশনের রাস্তা গুলোতে দেখা যায়,ইচ্ছেমত মাইক বাজানো(যে কোন কিছু প্রচারনার কাছে,পিকনিকে,এমনকি খাবার, ঔষধ বিক্রি) গাড়ি অথবা মোটরসাইকেল চালানোর সময় সারাক্ষণ হর্ণে চাপ দেওয়ার আগে একটু ভাবা প্রয়োজন।আমরা আধুনিকতার যুগে এসে রাস্তায় মাইকিং করে পণ্য বিক্রি করি। যার ফলে,কোন ব্যক্তি মারা গেলে, সরকারি জরুরি ঘোষণা শোনা থেকে বঞ্চিত হচ্ছি প্রতিনিয়ত।সাধারণ জনগণ এটাকে শব্দ সন্ত্রাস হিসাবে আখ্যায়িত করে। স্টেশনের পাশে স্কুল,কলেজে পড়ুয়া ছাত্র ছাত্রীদের পড়াশোনার ব্যঘাত হচ্ছে। ছাত্র ছাত্রীরা পড়াশোনায় মনোনিবেশ করতে পাচ্ছে না। দিন দিন মানষিক সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। আমরা সাধারণ জনগণ সব কিছুর জন্য নিজেদের নির্দোষ প্রমাণ করতে মরিয়া৷ আর সব দোষ সরকার ও সরকারি দপ্তরের, স্থানীয় চেয়ারম্যান, মেম্বার মহোদয়কে দোষ মেখে দিয়ে নিজেদের দায় মুক্ত রাখি। কিন্তু আমরা আমাদের নিজের বিবেককে প্রশ্ন করি,এর জন্য দায় কি আমরা নই? আমরা জনগণ চাইলে সবার ঐক্যতে শব্দ দূষণ রোধ করতে পারি না? যদি বলি আমরা পারি না, কারণ আমরা সবাই যে যার স্থান থেকে মনের দূষণে দূষিত হচ্ছি প্রতি নিয়ত। চাইলে সম্ভব,মনের দূষণ দূর করে শব্দ দূষণ রোধে ঐক্য সৃষ্টি করি। কারণ এই দেশ সবার।আমাদের উখিয়া উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ স্টেশনে যানজট ও গাড়ির হর্ণের তৈরি শব্দ দূষণ মুক্ত রাখতে আরো বেশি করে ট্রাফিক পুলিশ নিয়োগ করা হোক। সাথে আইন ভঙ্গের জরিমানার ব্যবস্থা করা হোক।
পরিশেষে বলতে চাই,
আসুন সবাই মিলে সুন্দর উখিয়া বিনির্মানে সরকার ও সরকারের প্রতিনিধিদের সাথে ঐক্যতার মাধ্যমে শব্দ দূষণ বন্ধ করি।
লেখক
প্রভাষক শুভংকর বড়ুয়া
পালং মেডিকেল ইনস্টিটিউটস
উখিয়া,কক্সবাজার।