‘গাধা জল খায় ঘোলা করে’। বাংলাদেশ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সম্মেলনের দাবিটাও গাধার জল খাওয়ার মতো অবস্থা। তারা মিডিয়ায় ছাত্রলীগকে বিতর্কিত করে সম্মেলনের আওয়াজ তুলেছেন। অথচ সম্মেলন দাবিটা অত্যান্ত যৌক্তিক। গঠনতন্ত্র মতে সম্মেলনের দাবি কর্মীদের সাংগঠনিক অধিকারও বটে। কিন্তু তা না করে দলের সুনাম নষ্ট করে, দলকে ইমেজ সংকটে ফেলে তারা কি আসলেই সম্মেলন চাই ? সেটিও প্রশ্ন..। প্রতিষ্ঠার পর থেকে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা দেশ ও জাতির সংকটময় মুহূর্তে জীবনের ঝুঁকি নিয়েছে, দিয়েছে জীবনও। সংরকীর্ণতা, সাম্প্রদায়িকতার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বিশলতা আর অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ বিনির্মাণে কাজ করছেন। নৈতিক শিক্ষায় বলিয়ান করছে প্রজন্মকে। বরাবরের মতো অন্ধকারের পথ মাড়িয়ে তৈরি করছে নতুন ইতিহাস। চলার পথ তৈরি করছে নিজেই। তৈরি করা পথে কখনো হাঁটেনি সংগঠনটি। এ সংগঠনের কর্মী হওয়াটা অত্যান্ত গর্বের, নেতা হতে পারটা সৌভাগ্যের। কিন্তু দলের শীর্ষ পদ পেতে ছাত্রলীগের গর্বিত কর্মীরাও বিতর্কিত ভূমিকায় অবতীর্ণ হচ্ছেন অনেকে। নিজেরাই নিজেদের প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলছেন। মনে রাখা দরকার যোগ্যতা থাকার পরও সবাই সভাপতি/সাধারণ সম্পাদক হতে পারেন না। এ পদে দুইজন নির্বাচিত হন। তবে, গঠনতন্ত্র মতে সঠিক সময়ে সম্মেলনের দাবি করতে পারেন। গঠনতান্ত্রিক ধারা বজায় থাকলে নেতৃত্বের প্রতিযোগিতার নোংরা খেলাও কমে আসবে। একই সাথে যৌক্তিক দাবি যদি থাকে সংগঠনের সাংগঠনিক নেত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার সাথে কথা বলতে পারেন। কিন্তু তা না করে গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতিনিয়ত সংগঠনের সুনাম নষ্ট করে চলছেন।
সমালোচকরা সমালোচনা করবে। ছাত্রলীগের ভাল কাজগুলো তারা কৌশলে এড়িয়ে যাবে। এটি স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু ক্ষমতা দখলে নিতে নিজ দলের আদর্শিক কর্মীরাও যখন সমালোচনায় সরব থাকে তখন চিন্তা করতে হবে পেছনে কিছু একটা ইঙ্গিত রয়েছে। অথচ প্রতিদিন কোথাও না কোথাও ভাল কাজ করছে। যা মিডিয়ায় প্রচার তো দুরের কথা, নিজেরাও প্রচার বিমুখ থাকেন।
সম্প্রতি সময়ের কথা বলি। পার্শ্ববর্তী দেশ মায়ানমারের অভ্যন্তরে বিদ্রোহী এবং সরকারি বাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষ চলছে। বিদ্রোহীদের দমন করতে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর ছোঁড়া মর্টাল শেল আমাদের দেশে এসে পড়ছে। এ অবস্থায় বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম এবং উখিয়ার পালংখালী সীমান্তে সাধারণ মানুষের মাঝে আতংক দেখা দিয়েছে। এরই মধ্যে শুরু হয়েছে এসএসসি পরিক্ষা। বান্দরবান জেলা প্রশাসন এবং নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা প্রশাসন পরিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে ঘুমধুম পরিক্ষা কেন্দ্র কক্সবাজার জেলার উখিয়ায় নিয়ে আসেন। সে মতে তাদের পরিক্ষা কেন্দ্র স্থাপন করা হয় কুতুপালং হাইস্কুলে। বিষয়টি জানার পর কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে পরিক্ষার্থীদের যাতায়াতের জন্য গাড়ির ব্যবস্থা করা হয়। একই সাথে নেয়া হয় নিরাপত্তা ব্যবস্থাও। এ কাজটি নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। কিন্তু সে পরিমাণ প্রচারণা আমরা দেখিনি। এমন কি নিজ দলের কর্মীরাও প্রচার করেননি। দেশে আরো অনেক ছাত্র সংগঠন রয়েছে। কিন্তু ছাত্রলীগ ছাড়া অন্যকোন সংগঠন এগিয়ে আসেনি। ভীতসন্ত্রস্ত পরিক্ষার্থীদের সাহস দেয়নি। এ কাজের জন্য কেউ ছাত্রলীগকে প্রশংসায় ভাসায়নি, দেয়নি সাধুবাদও। তাতে কি..? ছাত্রলীগ কখনো কারো প্রশংসার জন্য বসে থাকে ? না থাকে না। আকাশে বজ্রপাত হলে সবাই শোনতে পাই। এটি লুকিয়ে রাখার বিষয় নয়। ছাত্রলীগের কর্মকান্ডও লুকিয়ে রাখার বিষয় নয়। হয়তো কাজটি ছাত্রলীগ করেছে বলে প্রচার পায়নি। ভাল কাজের প্রশংসা না পেলেও পান থেকে চুন খসে পড়লেই সমালোচনার মুখে পড়তে হয় ছাত্রলীগকে। তাই যৌবনের দ্বীপ্ত শপথে এগিয়ে চলা ছাত্রলীগকে আরো সতর্ক হতে হবে। ৭১’ এর পরাজিত শক্তি সুযোগ পেলেই প্রতিশোধ নিতে চাইবে। তারা ইদুরের মতো গর্ত থেকে চেয়ে দেখে কখন ছাত্রলীগ একটি ভুল করে বসে থাকে।
জামায়াত শিবির বা ছাত্রদল ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে সাম্প্রদায়িকতার যে বীজ বপন করেছে তা সমাজে বিষবাষ্প ছড়ানোর আগেই বিনষ্ট করতে হবে। সে দায়িত্ব নিতে হবে ছাত্রলীগকে। নিজেদের মাধ্যে দলাদলি ভুলে গঠনতান্ত্রিক ধারায় দাবি আদায় করতে হবে। শিক্ষা, শান্তি আর প্রগতির ধারায় নিজেদের যোগ্য করে গড়ে তুলতে হবে।
সম্প্রতি ছাত্রলীগের সম্মেলনকে সামনে রেখে একটি পক্ষ ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। তারা জয়-লেখককে বির্তকিত করতে চাই। ব্যক্তি জয়-লেখককে প্রশ্নবিদ্ধ করতে গিয়ে পুরো সংগঠনকে প্রশ্নের মুখে ফেলে দিচ্ছেন তারা। নিজেদের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে যে পরিমাণ কাদা ছুঁড়াছোড়ি চলছে তাতে সংগঠনের সুনাম যা আছে তাও নষ্ট হচ্ছে। সংকটে পড়তে পারে ছাত্রলীগের ইমেজ। এটি কেন্দ্র থেকে শুরু করে জেলা উপজেলা পর্যন্ত বাসা বেঁধেছে। সংগঠনের দুর্নাম ছড়িয়ে নেতৃত্বে আসতে হবে কেন ? নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা থাকবে, সেটি যেন প্রতিহিংসায় রূপ না নেয়। চিন্তা করে দেখেন তো ঘুমধুম সীমান্তে পরিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দেয়া ছোট বিষয় কিনা। অথচ নিজ দলের কর্মীরাও এমন কাজের প্রশংসা করতে সময় পাননি ! বরং অমুক কেন কাজটি করছে তাই স্ট্যাটাসও দেয়া যাবে না ! মনে রাখা উচিত ভাল কাজ যে করবে করুক সেটি দলের জন্য সুখবর।
শেষ করার আগে বলি সম্মেলনের দাবি হোক গঠনতান্ত্রিক দাবি। কারণ গঠনতান্ত্রিক ধারায় সংগঠনের সম্মেলনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। নেতারা সম্মেলন করতে ব্যর্থ হলে পরবর্তী করণীয় কি হবে তাও গঠনতন্ত্রে বলা আছে। অযথা গাধার মতো জল ঘোলা করে ছাত্রলীগকে ধ্বংসের দিকে ধাবিত করবেন না।
লেখক-ওয়াহিদুর রহমান রুবেল, সাবেক সভাপতি, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কক্সবাজার সরকারি কলেজ শাখা।