এক বেঞ্চে ৫ জন বসিয়ে পরীক্ষা গ্রহণ

বেঞ্চ-সংকটে ভোগান্তি থাইংখালী দাখিল মাদ্রাসায়

আলাউদ্দিন, নিজস্ব প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ০২/১২/২০২৪ ৯:০৯ এএম , আপডেট: ০২/১২/২০২৪ ৯:১১ এএম

বেঞ্চ-সংকটের কারণে এক বেঞ্চে ৫ জন করে বসে পরীক্ষা দিচ্ছে থাইংখালী দাখিল মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা। এতে ব্যাপক ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে তাদের। উখিয়া উপজেলার পালংখালী ইউনিয়নের থাইংখালী বাজারের পূর্বে কাছেই অবস্থিত এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।

বিজ্ঞাপন

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, চলমান বার্ষিক পরীক্ষায় অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের গিজগিজ উপস্থিতি। বেশির ভাগ বেঞ্চে আড়াআড়িভাবে ৫ জন করে বসে পরীক্ষা দিচ্ছে; বাকি বেঞ্চগুলোতে বসেছে কমপক্ষে ৪ জন করে। এভাবে পরীক্ষা দিতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে অংশগ্রহণকারীরা; বিড়ম্বনায় পড়েছেন পরীক্ষকরাও।

• ৬৮০ জন শিক্ষার্থীর জন্য মাত্র ৮০ জোড়া বেঞ্চ
• শ্রেণিতে পাঠদান চলাকালে বেঞ্চে বসে ৬-৭ জনও
• অন্তত ৪০-৫০ জোড়া নতুন বেঞ্চের দরকার

মাদ্রাসা সূত্রে জানা গেছে, এক থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত ৬৮০ জন শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত এখানে। এর মধ্যে এ বছরের চলমান বার্ষিক পরীক্ষায় প্রায় শতভাগই অংশ নিয়েছে। কিন্তু ৬৮০ জন শিক্ষার্থীর বিপরীতে মাদ্রাসায় রয়েছে মাত্র ৮০ জোড়া বেঞ্চ।

হিসাবমতে, বেঞ্চপ্রতি ৩ জন করে বসলেও দুই শতাধিক (জোড়া) বেঞ্চ দরকার পড়ে।

শিক্ষার্থীরা বলেন, এক বেঞ্চে ৫ জন বসলে লিখতে কষ্ট হয়। একজন আরেকজনের গায়ের ওপর উঠে যায় এমন অবস্থা হয়। পর্যাপ্ত বেঞ্চ থাকলে বিনা ভোগান্তিতে পরীক্ষা দিতে পারত বলে দাবি তাদের।

সাধারণত দেখা যায়, গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষাগুলোয় এক বেঞ্চে ২ থেকে ৩ জন বসানো হয়। কিন্তু এখানে বসতে হচ্ছে ৫ জন করে। এভাবে পরীক্ষা গ্রহণ করলে স্বচ্ছতাও যথাযথ নিশ্চিত করা যায় না বলে মনে করে সচেতন মহল। এদিকে, এভাবে আড়াআড়িভাবে পরীক্ষা নেওয়ায় কর্তৃপক্ষের প্রতি অসন্তোষ প্রকাশ করেছে অভিভাবক মহলও।

মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষক ওবায়দুল্লাহ বলেন, শ্রেণিতে পাঠদান চলাকালে কখনো কখনো এক বেঞ্চে ৬-৭ জনকেও বসাতে হয়।

অপর সহকারী শিক্ষক আলা উদ্দিন বলেন, পাঠদান চলাকালেও বেঞ্চের সংকট থাকে; পরীক্ষার সময় আরও বাড়তি চাপ সৃষ্টি হয়। ফলে পরীক্ষার হলে শৃঙ্খলা বজায় রাখতেও কষ্ট হয়ে পড়ে। বেঞ্চ-সংকটের কারণে দুই শিফটে অতিরিক্ত ক্লাস করাতে হয় বলে জানান তিনি।

থাইংখালী দাখিল মাদ্রাসার সুপার আমিনুল ইসলাম এহসান বলেন, প্রায় সাত শ শিক্ষার্থীর জন্য ৮০ জোড়া বেঞ্চ দিয়ে পাঠদান অসম্ভবপ্রায়। প্রতি বছর শিক্ষার্থী বাড়ছে জানিয়ে তিনি বলেন, আগে শ্রেণিক্ষকের সংকট ছিল, এখন বেঞ্চের। এ ছাড়া নতুন করা একটি শ্রেণিকক্ষের কাজ এখনো অসম্পন্ন; সেখানে বেঞ্চ না থাকাসহ বিভিন্ন সংকটের কারণে পাঠদান কার্যক্রম শুরু করা সম্ভব হচ্ছে না। অন্তত ৪০-৫০ জোড়া নতুন বেঞ্চের দরকার বলে জানান তিনি।

এমপিওভুক্ত না হওয়ায় বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধাবঞ্চিত জানিয়ে তিনি আরও বলেন, তথ্য-প্রযুক্তির সাহায্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো নিজেদের এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এই আধুনিক যুগে এসেও আমাদের কোনো ‘মাল্টিমিডিয়া ক্লাস রুম’ নেই; নেই প্র্যাক্টিক্যালের জন্য ডিজিটাল সরঞ্জাম, সাউন্ড সিস্টেম, প্রাথমিক চিকিৎসা ইত্যাদি প্রয়োজনীয় জিনিস। এমনকি অফিসকক্ষে একটি ল্যাপটপ পর্যন্তও নেই বলে দাবি করেন মাদ্রাসা সুপার।

থাইংখালী দাখিল মাদ্রাসার পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও পালংখালীর ইউপি চেয়ারম্যান এম. গফুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, বেঞ্চ-সংকটের কথা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ উল্লাহ বলেন, মাদ্রাসাটিতে বিভিন্ন সংকট আছে তা নিয়ে আমরা অবগত। ফান্ড ব্যবস্থা করে বেঞ্চ-সংকটসহ মাদ্রাসার অসম্পন্ন কাজগুলো শিগগিরই সম্পন্ন করা হবে। এ ছাড়া তিনি সরেজমিনে পরিদর্শন করার কথা জানিয়েছেন।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) যারীন তাসনিম তাসিন বলেন, বেঞ্চ-সংকটের জন্য শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি অনাকাঙ্ক্ষিত এবং দুঃখজনক। এ ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

থাইংখালী দাখিল মাদ্রাসা ২০০১ সালে প্রতিষ্ঠা হয়। নানান চড়াই-উতরাই পেরিয়ে বর্তমানে ১০ পুরুষ, ৩ মহিলা শিক্ষক ও একজন অফিস সহায়ক নিয়ে চলছে এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।

পাঠকের মতামত