সর্বপ্রথম আমি ইউপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা সকল চেয়ারম্যান প্রার্থী, সাধারণ আসনের সকল প্রতিদ্বন্দ্বী এবং সংরক্ষিত মহিলা আসনের সকল প্রার্থীদের স্বাগত জানাই৷ দেশ ও জাতির কল্যাণে নিজেকে বিলিয়ে দেওয়ার অন্যতম মাধ্যম এটি৷ ইউপি নির্বাচনে প্রতিটি পদের দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে প্রত্যেক প্রার্থীর ধারণা থাকা বাঞ্ছনীয়৷ অধিকাংশ প্রার্থীই জানেনা যে, প্রতিদ্বন্দ্বিতা পদের দায়িত্ব কি এবং ঠিক কোন পয়েন্টে কাজ করা লাগে! আমার মনে হয়, প্রত্যেক প্রার্থীর বিশেষ করে চেয়ারম্যান প্রার্থীর প্রশাসনিক কার্যক্রম_গণসংযোগ কার্যক্রম_রাজস্ব ও বাজেট সংক্রান্ত কার্যক্রম এবং উন্নয়নমূলক ও বিচার বিষয়ক কার্যক্রমের দায়িত্ব সম্পর্কে যথাযথ জ্ঞান থাকা উচিত৷
অধিকাংশ প্রার্থীর নির্বাচনে অংশগ্রহণের উদ্দেশ্য অস্পষ্ট এবং প্রশ্নবিদ্ধ, ইচ্ছে হয়েছে তো প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেমেছে অথচ উক্ত পদের জন্য নিজেকে যোগ্য হিসেবে প্রমাণ করতে রীতিমতো ব্যর্থ হচ্ছে৷ অনেকে এটিকে বিনিয়োগ হিসেবে ট্রিট করতে উঠেপড়ে লাগে, অর্থের প্রলোভন দেখিয়ে ভোট কেনাবেচা এবং তাদের কুচক্রী মহলের আচরণে সেটির বাস্তব ছাপ সমাজে ফুটে ওঠে৷ নির্বাচনের আগে এবং পরে প্রার্থীদের মাঝে ভিন্ন আচরণ স্পষ্ট হয়, অসংখ্য ইশতেহারের মাঝে চাপা পড়ে তাদের মূল্যবোধ এবং দায়িত্বজ্ঞান৷ যাইহোক, আশা করি দেশ ও দশের মঙ্গলের জন্যই সকলে এই মহৎ কাজে সামিল হয়েছেন৷
সকল প্রকার প্রার্থীদের উদ্দেশ্যে আমার অনুরোধঃ নিজ দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে সৎ ও সচেতন হোন, এই মহৎ কাজে নিজেকে যোগ্য হিসেবে সমাজে প্রমাণ করুন৷ গ্রামাঞ্চলের খেটে খাওয়া মানুষগুলো আপনাদের থেকে কি আশা করে সেটি অনুধাবন করে এগিয়ে চলুন, সাধারণ জনগণের সরল মনকে আপনাদের অর্থের প্রলোভনে দুর্বলতা প্রমাণ করা থেকে বিরত থাকুন৷ নির্দিষ্ট জায়গায় কর্মপরিচয়ের ব্যাখ্যা না দিয়ে আপনার পুরো আসনটিতে কার্যক্রম পরিচলনা করুন, সরকার এবং বিশ্বব্যাংক কিংবা যেকোনো সংস্থা কতৃক গরিবের বাজেট খরচ এবং বিতরণে সর্বোচ্চ সততা দিয়ে কাজ করুন, নিজেদের পকেট ভর্তি করা কিংবা অন্যায়_দুর্নীতির আশ্রয়ে ব্যাংক ব্যালেন্স করা থেকে বিরত রাখুন৷ নিজের দেয়া ইশতেহারে বাস্তবতা আনতে না পারলেও অন্তত মিথ্যে আশ্বাসে সাধারণ জনগণের সরল মনকে আর জর্জরিত করবেন না, বরং সরকারি বরাদ্দ সঠিক পন্থায় গরিব মানুষগুলোর হাতে পৌছে দিন৷ এটুকুই চাওয়া রইলো আপনাদের কাছে৷
ইউপি আওতাভুক্ত সাধারণ জনগণের কাছে অনুরোধঃ প্রত্যেক পদের মানুষকে সম্মান করুন, তবে সেটি মাত্রাতিরিক্ত নয়! মাত্রাতিরিক্ত সম্মান রাজনীতিবিদের দূর্নীতির সহায়ক বনে যায়, কারণ তারা সেটিকে জনগণের দুর্বলতা ভেবে নেয়৷ অর্থের কাছে যোগ্য ব্যক্তিকে বিক্রি করে দিবেন না, এতে আলটিমেটলি আপনাদেরই ভরাডুবি হবে৷ যোগ্য প্রার্থীই নির্বাচন করুন, যাতে অন্তত তার যোগ্যতার সম্মানে হলেও সে অন্যায় করতে ভাবে৷ অর্থে এবং মিথ্যে বুলির সংস্পর্শে নিজেদের সারাজীবনের জন্য অযোগ্যদের কাছে জিম্মি করে রাখবেন না, অসৎ উপায় অবলম্বনের সুযোগ কিছুটা হলেও লাঘব হবে আপনাদের সচেতনতা এবং যোগ্য ব্যক্তি বিবেচনায়৷
প্রিয় ভোটারবৃন্দ, নবাগত একঝাঁক তরুণ মেধাবী শিক্ষিত শ্রেণিকে আসন্ন ইউপি নির্বাচনে বিভিন্ন পদে প্রার্থিতা করতে দেখেছি৷ তাঁদেরকে সুযোগ দিন, যদি তাঁদের যোগ্য মনে করেন৷ এক্ষেত্রে অভিজ্ঞতার প্রশ্ন আনবেন না, তাঁরা যোগ্যতা নিয়ে আপনাদের সামনে নিজেদের প্রকাশ করেছে৷ কোনো ব্যক্তি অভিজ্ঞতা নিয়ে জন্মায় না, সকল নরনারী যেমন এক সময় শিশু ছিলো ঠিক তেমনি প্রত্যেক অভিজ্ঞ ব্যক্তি একসময় অনভিজ্ঞ ছিলো৷ আপনাদের সুযোগে তারা অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পেরেছে, সুতরাং নবাগত শিক্ষিত শ্রেণিকেও অভিজ্ঞতা অর্জনের সুযোগ আপনাদেরই দেওয়া উচিত৷ সমাজকে পরিবর্তন করার পূর্বে আপনার বিবেককে জাগ্রত করুন, আপনার আমিত্বই সমাজকে কলুষমুক্ত রাখতে পারে৷
মনুষ্যত্বের বিকাশ ঘটুক প্রতিটি রন্ধ্রে রন্ধ্রে, সমাজ কলুষমুক্ত হোক৷ দেশ ও দশের কল্যাণ বয়ে আসুক যোগ্য চরিত্রে, পরিবর্তন হোক লুটিয়ে পড়া সমাজ-ব্যবস্থার লুণ্ঠক খুঁটি৷ সুস্থ থাকুক প্রতিটি গ্রাম_শহর এবং পৃথিবীর মানুষ, সকল অত্যাচারিতের ন্যায় বিচার নিশ্চিত হোক৷ গরিব অসহায় মানুষের হক লুণ্ঠন না হোক, এই পৃথিবীর সকল মানুষ হোক সাম্যের কবিতার প্রতিটি কলির অনবদ্য সংস্করণ৷
মুহাম্মদ আবদুল ওয়াহেদ
ছাত্র; স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইন্সটিটিউট
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
পাঠকের মতামত